নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নড়িয়ায় না যাওয়ায় মন্ত্রীদের ভর্ৎসনা প্রধানমন্ত্রীর

পদ্মার ভয়াল ভাঙনে আক্রান্ত নড়িয়াবাসীর পাশে না দাঁড়ানোয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের তিরস্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তারা মানসিকভাবে শক্তি পেত। যখন এটা হলো না, তখন তা দুঃখজনক। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ছাড়াও সরকারের দায়িত্বশীল সিনিয়র মন্ত্রীদের ভর্ৎসনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের জন্য একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশের ভূখন্ডের মধ্য দিয়ে এই পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতের কাছ থেকে গ্যাট নীতিমালা অনুসারে শুল্ক বা কর ব্যতীত মাশুল ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা নদীর এই ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সর্বস্ব হারিয়েছেন। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাৎক্ষণিক হয়তো মানুষের এ ক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী সময়মতো সেখানে যাননি। কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেননি। সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তারা মানসিকভাবে শক্তি পেত। যখন এটা হলো না, তখন তা দুঃখজনক।

এ সময় নড়িয়ায় কোনো প্রকল্প নেই জানানো হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প তো মানুষের জন্য। যেখানে মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, আস্ত আস্ত দালানকোঠা, বাজার, নগর নদীর বুকে হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ বিলাপ করছে, মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, মানুষের খাবার জুটছে না, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ভেসে যাচ্ছে; তখন প্রকল্প তো পরের কথা। আগে তো অসহায় মানুষের কাছে ছুটে যেতে হবে। তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে। আশা দেখাতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে। ভাঙন ঠেকাতে শেখ হাসিনা কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদীর্ঘ করার উদ্দেশ্যে’ ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফর্ম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য চট্টগাম ও মোংলা পোর্টে যোগাযোগের জন্য যে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে, তার চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে নেপাল ও ভুটান ইচ্ছা প্রকাশ করলে যুক্ত হতে পারবে।

পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের যান ব্যবহার হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি ট্রানজিট ঠিক না, কারণ আমাদের পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদের আইন অনুযায়ী শুল্ক ও ট্যাক্স তাদের দিতে হবে। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী মালবাহী কার্গো শনাক্ত করতে ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।

চুক্তির বিভিন্ন শর্তাবলির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের ভেহিকল ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি (গ্যাট) এবং দেশের নিয়ম মেনে চলতে হবে, শুল্ক বিভাগ ডিউটিজ অ্যান্ড ট্যাক্সেস সমপরিমাণ বন্ড গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য গ্যাট প্রিন্সিপাল অনুসারে শুল্ক/কর ব্যতীত চার্জ ফি ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্থলবন্দর ব্যবহার করায় স্থলবন্দরের দক্ষতা বাড়াতে মাশুল আদায় করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রস্তাবিত চুক্তিতে কয়েকটি রুটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আগরতলা ভায়া আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ডাউকি ভায়া তামাবিল (সিলেট); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে সুতারকান্দি ভায়া শেওলা (সিলেট); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার ভায়া শ্রীমন্তপুর (কুমিল্লা)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close