বদরুল আলম মজুমদার

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বিএনপি-জাতীয় ঐক্য দূরত্ব কমছে না

বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের জোট গঠনের সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। শর্তের বেড়াজাল ও প্রত্যক্ষ চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই দল বা জোটের অবস্থান যেভাবে পরিষ্কার হচ্ছে তাতে জোট হওয়ার বিষয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে না বিএনপি। ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য থেকে ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ঐক্যজোটের দেয়া লক্ষ্যের উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপিতে ক্রমেই সন্দেহ বাড়ছে। তাছাড়া ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের চাওয়া-পাওয়ার জায়গায় বিএনপি এখনো প্রকাশ্যে কথা না বললেও এসব দাবি বিএনপির পক্ষে মানা সম্ভব নয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে জোটে যুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় দূরত্ব কমার থেকে বরং বেড়ে চলেছে। তাছাড়া জোট নেতাদের প্রকাশ্যে কিছু কথাবার্তায় বিএনপির রাজনীতির ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, জোট করতে চাইলে সব বিষয়ে সরাসরি কথা বলা যায় না। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে ঐক্যের নেতারা প্রকাশ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে নিয়ে বক্তব্য রাখছেন। তারেক হচ্ছেন বিএনপির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। তার সম্পর্কে ভালো খারাপ বলে বিএনপিকে পাওয়া দুষ্কর। একটি বেসরকারি টিভির সাক্ষাৎকারে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেছেন, ঐক্য করতে যুক্তফ্রন্ট বিএনপির সঙ্গে যাচ্ছে না, বিএনপি আসতে চাইলে যুক্তফ্রন্টের অধীনে আসতে হবে। একই দিন ড. কামাল তারেক রহমানকে নিয়ে আপত্তির কথা জানান। এসব বক্তব্যকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা খুবই কঠিন হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, কৌশল ধরে শুধু বিএনপিকেই চাপে রাখার চেষ্ঠা করা হচ্ছে বলে ঘরোয়াভাবে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছেন, চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোলে ঐক্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে। বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের ঘোষণায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা ছাড়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজ এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারবে।’ বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘পরোক্ষ’ স্বাধীনতাবিরোধী বলতে তারা কৌশলে বিএনপিকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন হয়তো। আবার বিএনপি যাতে কোনোভাবেই জামায়াতকে আসন বা ক্ষমতাভাগের জায়গা নিতে না পারে তার জন্যই কৌশল করা হচ্ছে। বর্তমানে জামায়াতের নিবন্ধন নেই, তাই দলটির ইস্যুতে বিএনপির বক্তব্যও পরিষ্কার। আর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে শুধু বিএনপি। সেই ক্ষেত্রে জোটকে ঐক্য প্রক্রিয়ার পার্টনার হিসেবে নিতে চায় না বিএনপি। তাই জামায়াত নিয়ে বাড়তি বলা কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।

মাহি বি. চৌধুরী বলেন, প্রত্যক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী দল কারা সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কোনো দল যদি স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় সেই দলের সঙ্গেও ঐক্য হবে না। স্বাধীনতাবিরোধী ‘দল’ বা ‘ব্যক্তিদের’ পুরোপুরি বর্জন করতে হবে।

এ নিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না থাকা সত্ত্বেও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে মিলে যুগপৎ কর্মসূচি পালনেরও পক্ষে ছিল বিএনপি। কিন্তু বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের ঘোষণার পর মনে হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়ায় অশুভ শক্তির কালো ছায়া পড়তে শুরু করেছে।

তাছাড়া বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করার শুরুতেই বিকল্পধারা দলটির কাছে ১৫০ আসন দাবি করে। যা ওই সময় জোট গঠনে বিএনপিকে পিছু হটতে বাধ্য করে। বিকল্পধারা ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে এই প্রস্তাব দিয়েছে বলা হয়। এতে বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যের স্বার্থে শতাধিক আসন ছাড় দিতেও চেয়েছেন। মান্নার দুই বছর ক্ষমতা শেয়ার করার বিষয়টিও বিএনপি ভালোভাবে নেয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, শর্ত দিয়ে তারা বৃহত্তর ঐক্য চান। আমাদেরও নিজস্ব কিছু দাবি আছে। বিএনপি জোট গঠনের ব্যাপারে কাজ করছে। শিগগিরই যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের শর্ত নিয়ে দলের ফোরামে আলোচনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close