নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাসে ওঠা-নামায় মাঝ রাস্তাই পছন্দ!

অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনী, আছে চমৎকার বসবার ব্যবস্থাও। তারপরও স্টপেজটিতে না আছে যাত্রীদের মনোযোগ, না আছে বাসচালকদের আগ্রহÑ এই অবস্থা খোদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন বাস স্টপেজের চিত্র। গতকাল বুধবার ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে একটি বাসকেও নির্ধারিত স্টপেজে দাঁড়াতে দেখা গেল না। স্টপেজের পাঁচ গজ আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রবেশ পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে বাসগুলো।

মজার বিষয় হচ্ছে, একটি বাস দাঁড়ানোর পর পরের বাসটি কিন্তু তার পেছনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এভাবে পুরো পথই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ দাঁড়ানো বাসটির সামনে গেলেই নির্ধারিত স্টপেজ।

কিন্তু তাদের সেদিকে আগ্রহ নেই। স্টপেজে গেলে তাদের জরিমানা করা হবে, এমন ভাব। যেভাবে পারছে এড়িয়ে চলছে মনে হচ্ছে।

এই অশুভ প্রতিযোগিতায় খানিকটা এগিয়ে রয়েছে বিআরটিসির বাসগুলো। এদের প্রত্যেকের গায়ে পোস্টার সাঁটানো ‘নির্ধারিত স্টপেজ ব্যবহার করি, নিরাপদে বাসায় ফিরি’। কিন্তু সেই দ্বিতল বাসটিকে দেখা গেল স্টপেজের ৫০ গজ আগেই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা-নামা করতে।

আবার একই অবস্থা বিপরীত দিকের লেনেও। এখানেও রয়েছে অত্যাধুনিক মনোরম যাত্রী ছাউনী। তারপরও একই অবস্থা। মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি বাসকে নির্ধারিত স্টপেজে গিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেল। তা-ও পুরোপুরি সাইড করে নয়, স্টপেজ সোজা রাস্তার ওপরেই।

স্টপেজের আগেই অপেক্ষমান যাত্রীদের উপেক্ষা করে যখন বাসটি এগিয়ে গিয়ে স্টপেজে থামল, তখন যাত্রীরা পড়িমড়ি করে দৌড়ে গেলেন উঠতে। কিছু যাত্রী উঠতে পারলেন আবার অনেকে ব্যর্থ হলেন। যারা ব্যর্থ হলেন তারা কিন্তু ফের ঘুরে আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ঠিক ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের প্রবেশ পথ ঘেঁষে।

সোহাগ নামে এক যাত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল স্টপেজে না দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপর কেনো দাঁড়াচ্ছেন। জবাবে তিনি বললেন, আসলে স্টপেজেই যাত্রীদের থাকা উচিত। তবে কেউ থাকে না। তাই আমিও এখানে দাঁড়িয়েছি।

নির্ধারিত স্টপেজের আগে রাস্তার ওপর দাঁড়ানো প্রসঙ্গে প্রশ্ন ছিল আন্তরিক ক্লাসিক লিমিটেড (ঢাকা-কিশোরগঞ্জ) বাসের হেলপার আবদুল করিম মিয়ার কাছে। তার সরল স্বীকারোক্তি সবাই দাঁড়ায়, তাই আমরাও দাঁড়াই।

প্রজাপতি পরিবহনের হেলপারের কাছে একই প্রশ্ন ছিল, তার জবাব- একই; এটা তো স্টপেজই। অথচ তার অবস্থান থেকে পাঁচ গজ দূরে রোড সাইন দেওয়া ‘বাস স্টপেজ শুরু’।

অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন তোলেন, ভালো ব্যবস্থা থাকলে নিশ্চয় যাত্রীরা সেটা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। কিন্তু কেনো ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশের সর্বাধুনিক এই যাত্রী ছাউনী ব্যবহারেও আগ্রহ নেই যাত্রীদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় মগ্ন তারা।

ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে যখন ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠা-নামা দেখছিলাম, তখন প্রতিক্ষণেই মনে হচ্ছিল এই বুঝি চাপা পড়ল কেউ।

আগের মতো বাসে বাসে বেপরোয়া টোকাটুকি নেই, তবে একেবারেই যে বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা বলার সময় আসেনি। একটি বাস দাঁড়ালে পেছন দিক থেকে এসে তার দরজা আগলে দাঁড়ানোর চেষ্টা লক্ষণীয়। আর এই প্রচেষ্টায় ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close