শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জামিনে মুক্তি পেতে মরিয়া ‘সিরিয়াল কিলার’ খোকন

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই খুনের মামলার আসামি হন শহীদুল ইসলাম খোকন (৪৬)। একের পর এক হত্যার ঘটনায় জড়িয়ে তিনি এখন সাতটি খুনসহ ১৩টি মামলার আসামি। পরিচিতি পেয়েছেন ‘সিরিয়াল কিলার’ হিসেবে। তিনটি মামলায় তার যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়; তবে এসব মামলায় আপিল করে জামিন পেয়েছেন কারাবন্দি খোকন। বিচারাধীন বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তির পথ সহজ করে নিয়েছেন তিনি। এখন একটি হত্যা মামলায় জামিন পেলেই মুক্তি পেয়ে যাবেন খোকন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম খোকন ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন। ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে প্রতিবেশী মেহেরুজ্জামানকে খুন করেই খুনের খাতায় নাম লেখান। জামিনে বের হওয়ার পর ১৯৯১ সালে গফুর, মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছোবহান ও ইসমাঈলকে খুনের ঘটনায়ও অভিযুক্ত হন তিনি। ১৯৮৯ সালে খুন হওয়া মেহেরুজ্জমানের ছেলে ননাইয়া ২০০২ সালে খুন হন; ওই খুনের ঘটনায়ও মূল অভিযুক্ত খোকন। ২০১৪ সালে মাহবুব আলম ও ২০১৫ সালে জিল্লুর রহমান ভান্ডারীকে খুন হলে আসামি হন খোকন। একের পর এক সাতজনকে খুনের ঘটনার দায়ের হওয়া মামলায় খোকন এজাহারভুক্ত আসামি। এ ছাড়াও ১৯৮৮ সালের অস্ত্র মামলা, ১৯৯১ সালে সোনারগাঁও এলাকার ডা. কাশেম ঘর ডাকাতির মামলা, একই বছরে ডা. আনোয়ার ইসলামের ঘর ডাকাতির মামলা, ১৯৯৪ সালে রাজারহাট বাজারে ডাকাতি মামলা, ২০০৩ সালের শিশু অপহরণ মামলা, ২০১৪ সালে আমীন হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি খোকন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ছোবহান হত্যায় খোকনের যাবজ্জীবন ও ১৯৯৪ সালে রাজারহাট বাজারের ডাকাতি মামলায় খোকনের ১০ বছরের সাজা হয়। ১৯৮৮ সালের তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলায় ১০ বছরের সাজা হলেও নথির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯১ সালে ইসমাঈলকে খুনের ঘটনায়ও দায়ের হওয়া মামলাটি বিচারাধীন আছে জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনাল। ওই মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ওই মামলার নির্ধারিত দিন রয়েছে।

এদিকে সব মামলায় জামিন হলেও জিল্লুর ভান্ডারী হত্যা মামলায় জামিন পাননি খোকন। ওই হত্যা মামলায় ৯ সেপ্টেম্বর তার জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আবদুল মজিদ। মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর দিন নির্ধারিত আছে। তবে সর্বশেষ এই মামলায় জামিন নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন খোকন। উচ্চআদালতে বেশ কয়েক বার জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এই মামলায় রহস্যজনক কারণে গত দেড় বছরে অভিযোগ গঠনের চারটি নির্ধারিত তারিখে সরকারি কৌঁসুলী সময়ের আবেদন করায় পিছিয়ে যায় বিচার শুরুর প্রক্রিয়া। নিহত জিল্লু ভান্ডারীর পরিবারের অভিযোগ, বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক থাকার অজুহাতে অভিযুক্ত খোকন যাতে জামিন পায়Ñ সেই সুযোগ করে দিতে সরকারি কৌঁসুলী অভিযোগ গঠন পেছাতে একের পর এক সময়ের আবেদন করছেন আদালতে।

অভিযোগ গঠন করতে রাষ্ট্র পক্ষের বার বার সময়ের আবেদন করা প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা পিপি আ ক ম সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলাকে অন্য কোন সাধারণ মামলার মতো বিবেচনা করা যাবেনা। নির্ধারিত আদালতে বিচারক নেই, তাই আমরা সময়ের আবেদন করেছিলাম। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার বলেন, বিচার বিলম্বের কারণ তৈরি করে জামিন পেতে আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে ব্যবহার করছেন। সরকার পক্ষ নজিরবিহীনভাবে চারবার সময়ের আবেদন করায় অভিযোগ গঠন পিছিয়ে যায়। ফলে মামলার অন্যতম আসামি খোকন জামিনের আবেদন করছেন।

তিনি বলেন, খোকনের বিরুদ্ধে সাতটি হত্যা মামলা আছে। তিনি জামিনে গিয়ে আগেও হত্যা, ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপ ও অপহরণের মতো অপরাধ করেছিলেন। জামিনে গেলে তিনি আবারো একই ধরনের অপরাধ করতে পারেন। এমনকি বিচার বানচাল করার মতো কাজেও অংশ নিতে পারেন।

সুশাসনের জন্য সাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ভয়ংকর অপরাধীরা জামিনে মুক্তি পেলে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের দ্রুতবিচার, কঠিন শাস্তি সমাজে দৃশ্যমান করতে হবে, তবেই অপরাধে জড়াতে অন্যরা সাহস করবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close