বিবিসি বাংলা

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে বিজেপির হুমকি

বাদ পড়াদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে

ভারতের আসাম রাজ্যে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা বা এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ‘ডিপোর্ট’ করা হবে বলে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বিজেপির অত্যন্ত প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব গত সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এনআরসি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তাদের এই নীতির কথা জানান। এটা যে তার কোনো ব্যক্তিগত দাবি নয়, বরং বিজেপির ‘সুচিন্তিত মতামত’, সেটাও তিনি সোমবার সভার পর একান্ত আলোচনায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) এর দ্বিতীয় খসড়ায় প্রায় চল্লিশ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা এদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করে না, আর তাই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ারও কোনো প্রশ্ন নেই।

রাম মাধব বলেন, ‘এখানে আমাদের পরিকল্পনা হলো তিনটে ডি-ডিটেক্ট, ডিলিট ও ডিপোর্ট। অর্থাৎ প্রথম ধাপে অবৈধ বিদেশি কারা, তাদের শনাক্ত করা হবে (ডিটেক্ট) - যেটা এখন চলছে।’

‘তারপর ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া ও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে (ডিলিট)। আর তারপর আমরা তাদের বাংলাদেশে ডিপোর্ট করব!’

এর আগে বিজেপির শীর্ষ স্তরের কোনো নেতাই এত স্পষ্টভাবে এসব কথা বলেননি। ওই আলোচনা সভায় হাজির ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। তিনি মন্তব্য করেন, ‘অবৈধ বিদেশিদের খুঁজতে আসামের পর এবার সারা ভারতেই এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করা উচিত।

রাম মাধব যখন ডিপোর্ট করার কথা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সোনোওয়ালসহ সভায় উপস্থিত বিজেপির শীর্ষ নেতারা ও শ্রোতা-দর্শকরা টেবিল চাপড়ে ও তুমুল করতালিতে সেই মন্তব্যকে স্বাগত জানান।

বস্তুত রাম মাধব ‘অবৈধ বিদেশিদের যেভাবে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে পরিষ্কার বিজেপির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেক ভাবনাচিন্তা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অনেকে হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, সেখানে কীভাবে আপনি এই লোকগুলোকে ডিপোর্ট করবেন? বন্ধু তো সবাইÑ তাই বলে কি তাদের যেসব লোকজন অবৈধভাবে এখানে আছেন তাদের কি ফেরত পাঠানো যাবে না?

‘আরে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দিকেই তাকান না। বাংলাদেশ নিজেরাই তো লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সে দেশের সঙ্গে সক্রিয় আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে। সৌদি আরবও সে দেশে থাকা অবৈধ পাকিস্তানি, বাংলাদেশি বা ভারতীয়দের মাঝ মাঝেই ফেরত পাঠায়। কাজেই ডিপোর্ট করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।’

ভারত সরকার ‘বন্ধুপ্রতিম’ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিষয়টি ঠিকই ‘কূটনৈতিক দক্ষতায় ম্যানেজ করে নিতে পারবে’ বলেও তিনি দাবি করেন।

রাম মাধব শুধু বিজেপির সাধারণ সম্পাদকই ননÑ দলের কাশ্মীর নীতি থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতের নীতি, সবই তিনি দেখাশুনো করেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের সঙ্গে বিজেপির প্রধান সেতুও তিনি। দলের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি ও কর্মকান্ডও পরিচালিত হয় রাম মাধবের নির্দেশে। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বা এইচ টি ইমাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ কিংবা জাকের পার্টির নেতা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদি দিল্লিতে যারাই আসুন না কেন, রাম মাধবের সঙ্গে তারা দেখা করবেন ধরেই নেওয়া যায়।

দিল্লিতে রাম মাধব ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামে যে থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত, সেখানকার সেমিনারে বাংলাদেশের নেতা-মন্ত্রী-নীতি নির্ধারকরা নিয়মিতই যোগ দিয়ে থাকেন।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছি।’

‘ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিচালিত এই প্রক্রিয়া যে এখনো শেষ হয়নি এবং খসড়ায় যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা যে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার আরো অনেক সুযোগ পাবেন সেটাও বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close