নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিশ্বে মডেল : শেখ হাসিনা

* আজ থেকে আরো কাছে এলাম : মোদি * আপনি জিতুন, আমরা আসব : মমতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক বজায় আছে তা বিশ্বে একটি রোল মডেল। বহু বছর ধরে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ এবং সুনামের কারণে সম্পর্ক পরিপক্বতা পেয়েছে। এই সুসম্পর্ক আমাদের দৃঢ় আস্থার সঙ্গে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’ গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর গণভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্ত হন।

কনফারেন্সে মোদি হিন্দিতে বক্তব্য দিলেও শেষ পর্যায়ে তিনি বাংলায় বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরো কাছে এলাম। আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো।’ এ সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ইতিহাসের ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবেও অভিহিত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।

জবাবে মমতা বলেন, ‘আপনি জিতুন, আমরা আসব। বাংলাদেশ ভালো থাকলে পশ্চিমবঙ্গও ভালো থাকে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি সেক্টরে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে এগিয়ে যাচ্ছি। সে হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এ বিদ্যুৎ পেলে বাংলাদেশের অনেক সাফল্যগাথার সঙ্গে ভারতের অবদান থাকবে। ভারতের কাছ থেকে নতুন নতুন সহযোগিতার ফলে নতুন নতুন বাতায়ন খুলে যাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরো অটল থাকবে। এই সহযোগিতার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।’

জানা যায়, নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট আসবে ভারতের সরকারি খাত ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ থেকে। ২০০ মেগাওয়াট আসবে সে দেশের বেসরকারি খাত ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন’ থেকে। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গের বহরূপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্তবিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।

বর্তমানে ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হওয়ার পর ভারত থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৬৬০ মেগাওয়াটে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সোমবার বিকেলে হলেও রোববার মধ্যরাত থেকেই পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পুনর্বাসন প্রকল্পের খরচের একটি বড় অংশ মেটানো হবে ভারতের এক বিলিয়ন ডলার ঋণের অংশ থেকে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের ৪৭৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ হিসেবে দেবে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারই জোগাবে। রেলপথের পাশাপাশি কালভার্ট, প্যাসেঞ্জার প্লাটফর্ম, প্লাটফর্ম শেড, কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ভবন এবং পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের রেল যোগযোগ সহজ হবে। রেলপথে ত্রিপুরা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে ৫১৫ কিলোমিটারে।

আর কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুরের মধ্যে ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন কাজে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৫৫৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা; আর ১২২ কোটি ৫২ লাখ ৩ হাজার টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

এ প্রকল্পের অধীনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে রেলসেতু, স্টেশন ভবন, প্লাটফর্ম, রেললাইন এবং অন্য রেল অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।

আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, নবনির্মিত ৪০০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের দ্বিতীয় ব্লক উদ্বোধন উপলক্ষে ভেড়ামারা উপকেন্দ্র সম্মেলন কক্ষে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণিল আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাসহ জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি, বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবির অর্থায়নে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেড়ামারায় ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির দ্বার উন্মোচিত হলো। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর এখানকার ১ম ব্লক উপকেন্দ্র নির্মাণ শেষে পরীক্ষামূলক আংশিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন উদ্বোধন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close