নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ আগস্ট, ২০১৮

রাজধানীতে কোনো বস্তি থাকবে না

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীর বস্তিগুলো বহুতল ভবনে প্রতিস্থাপিত হবে, যাতে করে নগরবাসী উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে কোনো বস্তি থাকবে না। এর স্থলে ২০তলা করে ভবন গড়ে তোলা হবে। এখন যেমন বস্তিবাসীরা ভাড়া দিয়ে থাকেন, তেমনি তখন তারা ওইসব ভবনেও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে বসবাস করবেন। এছাড়া প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষকে রাজধানীতে আসতে হয়। আবার আমাদের দৈনন্দিন কাজেও এই শ্রমিক শ্রেণির প্রয়োজন পড়ে। তারা যেন একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, সেজন্যই তাদের বসবাসের জন্য একটু ভালো পরিবেশের দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, বস্তিবাসীরা এখন বস্তিতে যে ভাড়া দিচ্ছেন, সে ভাড়াতেই এখানে থাকবেন। অবশ্য তাদের ভাড়া দিয়েই থাকতে হবে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে, কাজেই তারাও যেন সেই ছোঁয়াটা পান, সেটা আমাদের দেখতে হবে। তিনি বলেন, কেবল অবস্থাসম্পন্নদের জন্যই নয়, আমাদের উন্নয়ন সবার জন্য।

ঢাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে একই পাইপলাইনে নিয়ে আসতে চীন সরকারের সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসার ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন মহাপ্রকল্পের অংশ হিসেবে খিলগাঁও এলাকায় এই দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে রাজধানীতে আরো চারটি পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এতে পাগলায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় দুইটি এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় রায়েরবাজার এবং উত্তরায় আরো দুইটি পয়োশোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও উপস্থাপনায় জানানো হয়, ৩ হাজার ৩৭৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। ২৪ হেক্টর জমির ওপর বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ৫০ লাখ নগরবাসীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুয়ো ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বক্তব্য দেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, অন্যান্য হুইপ এবং সরকারের পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তি এলাকার পানির ব্যবস্থা আমি করছি, কিন্তু ঢাকা শহরের বস্তিগুলো এখন যে দুরবস্থার মধ্যে আছে, সে বস্তি ঢাকা শহরে থাকবে না। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, মানুষ কেন এই মানবেতরভাবে জীবন যাপন করবে। তারাও মানুষ, তারা কোনো না কোনো কারণেই বস্তিতে আসে। বস্তিবাসীর জন্য তার সরকারের বহুতল আবাসন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকবে অথচ আমার বস্তিবাসী থাকবে না, এটা কেমন কথা। বিদ্যুৎ, পানির প্রিপেইড মিটার থাকবে, তারা যতটুকু ব্যবহার করবে তার বিল দেবে। কারণ শহর যত উন্নত হয়, তার কাজের জন্য এ ধরনের কর্মীও লাগে। কাজেই তাদের জীবনমানটা যেন উন্নত হয়, সেদিকেও ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। এরই মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিছু পরিকল্পনা করেছে যেগুলো তিনি দেখে দিয়েছেন। কাজও শুরু হয়েছে ।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা মহানগরীর পানি শোধনাগারগুলো পানির উৎস মূলত চারপাশের নদী। নদীর তলদেশের বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করার জন্য এরই মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যারা এখানে কাজ করবেন প্রত্যেককে এ কথা মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকে মানুষকে সেবা দেওয়ার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

তার সরকারই প্রথম ১৯৯৬ সালে ঢাকা মহানগরীর জন্য নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ওয়াসার সেবা ও কার্যপরিধির পুনর্বিন্যাস করে ‘ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬’ প্রণয়ন করি। এরপর ২০০৯ সালে পুনরায় আমরা ক্ষমতায় এসে দেখতে পাই ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এক বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, আমার প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ২০১০ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করে। ঢাকা ওয়াসা একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি বালু নদ এবং ধলেশ্বরীও ড্রেজিং করতে হবে। যেন সেখান থেকে পানির প্রবাহটা বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ঠিক থাকে এবং বৃষ্টির পানিটাও ধরে রাখতে পারে। নদী ড্রেজিং ছাড়া আমাদের এই দেশকে রক্ষার আর কোনো উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি, এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যদি আমরা না করি তাহলে ওই হাতিরঝিলকে রক্ষা করা সম্ভব নয়, কারণ সেখানকার পানি পচে যায়। তিনি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বারিধারা, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, সংসদ ভবন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা ও দূষণ বন্ধ হবে এবং এসব এলাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close