নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ আগস্ট, ২০১৮

রাজধানীর এক ইয়াবা পরিবার

ওষুধের দোকানের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করে জহির আহাম্মেদ ওরফে মৌলভী জহিরের গোটা পরিবার। জহির হলেন ইয়াবা চোরাচালান চক্রটির হোতা। তিনি ও তার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে ইয়াবা সরবরাহ করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ। জহির ছাড়া গ্রেফতার অন্যরা হলেন ফয়সাল আহাম্মেদ, মিরাজ উদ্দিন নিশান, তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি, সঞ্জয় চন্দ্র হালদার ও মমিনুল আলম ওরফে মোমিন।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জহির হলেন ইয়াবা চোরাচালান চক্রটির হোতা। তিনি ও তার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। বাবু গত ২৫ এপ্রিল মাদকদ্রব্যসহ ধানমন্ডি এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে গ্রেফতার হন। এখন তিনি কারাগারে। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আবদুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিন। জহিরের সঙ্গে টেকনাফের বেশ কয়েকজন জড়িত। এই সিন্ডিকেটে আরো জড়িত পরিবহন খাতে কর্মরত কয়েকজন চালক ও সহকারী, দুটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারী, ঢাকার কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা। এই সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জহির জানান, এই সিন্ডিকেটের মিয়ানমারের প্রতিনিধি আলম ওরফে বর্মাইয়া আলম। তিনি মিয়ানমারের মংডুতে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। টেকনাফেও বর্মাইয়া আলমের একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে নৌপথে মংডু থেকে ইয়াবা পাচার করে টেকনাফের নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে ইয়াবা মজুত রাখেন। মজুত করা ইয়াবা জহির ও তার জামাতা আবদুল আমিন, নুরুল আমিন ও মোমিন টেকনাফে বর্মাইয়া আলম কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। পরে তারা টেকনাফ বা কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।

বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামাদি, যেমন : ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, এসি ইত্যাদির ভেতর ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হতো। যাত্রীবাহী বাসে পরিবহনের সময় টেকনাফের দুই ব্যক্তি বাহক হিসেবে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে বহনকারী ছাড়া নির্ধারিত চালক ও সহকারীর মাধ্যমেও ঢাকায় ইয়াবা পাঠানো হতো। উদ্ধারকৃত ইয়াবাগুলো সাত-আট দিন আগে দুটি চালানে কার্টনে এসি ও ফ্যানের ভেতরে ঢুকিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছিল। এই সিন্ডিকেটের আবদুল আমিন ও তার ভাই নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় আছেন।

র?্যাব বলছে, ফয়সাল আহাম্মেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। তিন বছর ধরে ইয়াবা সেবন করে আসছেন এবং ধীরে ধীরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদে মিরাজ উদ্দিন জানান, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। গ্রেফতার করা মোমিন ও তার বাড়ি একই অঞ্চলে হওয়ায় পরিচয় সূত্রে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সেবনকারীও।

জিজ্ঞাসাবাদে তৌফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে ম্যানেজমেন্টে প্রথমবর্ষে পড়েন। তার কলেজের বন্ধু গ্রেফতার মিরাজ উদ্দিন নিশানের সূত্র ধরে মোমিনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি গত দেড় বছর থেকে ইয়াবা সেবন এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চন্দ্র হালদার জানান, তিনি মাদারীপুর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি এক বছর ধরে ইয়াবা সেবন করছেন এবং তৌফিকুল ইসলামের মাধ্যমে নিশানের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সংগ্রহ করে শরিয়তপুরে খুচরা বিক্রি করে আসছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close