নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জুলাই, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা

জনগণ কী পেল সেটাই চাওয়া

* এ মনিহার আমায় নাহি সাজে * মৃত্যুর আগে মরতে রাজি না * যারা বলে নৌকা ঠেকাও তাদের উদ্দেশ্যটা আসলে কী?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণ কী পেল সেটাই আমার বড় চাওয়া। আমি এই সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করলাম।’ কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, ‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে। যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাব। মৃত্যু ভয় পাই না। মৃত্যুর আগে মরতে রাজি না।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন। সংবর্ধনা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকা থেকে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও হেঁটে অসংখ্য নেতাকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তি, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণ ঐতিহাসিক এই উদ্যানে জড়ো হন।

অনুষ্ঠান বিকেলে হলেও দুপুরের মধ্যেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে ভাষণ দিতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি উদ্যানে পৌঁছলে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা হাত নেড়ে, পতাকা উঁচিয়ে মুহুর্মুহু সেøাগানে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে জীবন গেলেও কোনো দুঃখ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, কলকাতা থেকে ডি-লিট উপাধি পাওয়াসহ নানা সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগ। আধঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মানপত্র পাঠ করেন। এই মানপত্র তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাই যখন আনন্দে উদ্বেলিত তখন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শুরুতে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো উদ্যান। বক্তব্যের প্রথম ২০ মিনিটের সিংহভাগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজের অতীত ইতিহাসের কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী যখন পঁচাত্তর ও তার পরবর্তী সময়ের কথা বলছিলেন, তখন তার গলা বারবার কাঁপছিল, আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন। স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল সংবর্ধনাস্থল। অনেককে চোখের পানি মুছতে দেখা গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জনগণের সেবক, আমি এই সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করলাম। জনগণ সুখে থাকলেই আমি খুশি। কারণ জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার জনগণ সুখে শান্তিতে থাকবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষ

যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান ও শিক্ষা পায়Ñ সেটাই আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করাই আমার লক্ষ্য। মৃত্যু যখন আসবে তখন মৃত্যু আসবেই। কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই। যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষের তো ২৪ ঘণ্টা সময়। এই ২৪ ঘণ্টা থেকে আমি মাত্র ৫ ঘণ্টা নিই। আমার ঘুমানোর সময়। এ ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। শুধু একটা জিনিস দেখতে চাই, এই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ অবশ্যই আমরা গড়ে তুলব। এই এগিয়ে চলার পথ আমরা যেন অব্যাহত রাখতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের জনগণ কিছু পায়, উন্নয়ন হয়। ২১ বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। একটা শ্রেণি আছে, তারা নাকি উন্নয়ন চোখে দেখে না। তারা আবার বলে নৌকা ঠেকাও। কেন নৌকা ঠেকাবেন? সামনে তো বন্যা আসছে তখন আপনাদের দলের নেতারা রিলিফ দিতে গেলে নৌকা লাগবে। তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলে বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছে, গণতন্ত্র পেয়েছে। বাংলাদেশে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্র্ণতা অর্জন করেছে। এখন জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? রাজাকারদের ক্ষমতায় আনতে নৌকা ঠেকাবেন? যারা দেশের জনগণ, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও উন্নয়নে বিশ্বাস করে না তারাই নৌকা ঠেকাতে চায়।

বিএনপি-জামায়াতের শামনামলে ধ্বংসপ্রাপ্ত রেলের পুনরুজ্জীবনে সরকার আলাদা মন্ত্রণালয়সহ নতুন নতুন স্থানে রেল যোগাযোগ স্থাপন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এবং উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত চারলেন করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ চলাচলের জন্য চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিমানবহর একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল, ইতোমধ্যে নতুন বিমান ক্রয় করা হয়েছে, আরো ৭টা নতুন বিমান আমরা ক্রয় করব। যা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করবে। সেই সঙ্গে সৈয়দপুর বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আরো উন্নত করব।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া রাজনৈতিক শিক্ষার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকে আমার বাবা কত ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে। দেখেছি মানুষের জন্য তার হাহাকার। এই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কত পরিকল্পনা তার ছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রাম-শহরে গড়ে তুলব আমরা। প্রতিটি গ্রাম হবে উন্নয়নের জায়গা, প্রতিটি গ্রামের মানুষ পাবে নাগরিক সুবিধা। ঠিক শহরের মানুষ যে সুবিধা পায়, সেইভাবে আমরা গ্রামের ?মানুষের অবস্থার উন্নতি করতে চাই। শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধা আর হাহাকার থাকবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের সরকারের উচ্চপদে চাকরি দিয়েছিল। আমরা ট্রাইব্যুনাল করে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলুষমুক্ত হয়েছে। এই অপরাধীদের যখন আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি তখনই যেন আমাদের উন্নয়নের দ্বার খুলে যায়Ñ এটাই আমার উপলব্ধি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জঙ্গিবাদের বীজ বপন করেছিল বিএনপি। জঙ্গি ও মাদক নির্মূল করতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। এদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমদু এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, পঁচাত্তরের ঘোর অমানিশা কাটিয়ে, মৃত্যুর পরোয়া না করে, বাংলার মানুষকে বুকে জড়িয়ে ১৯৮১ সালে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক রাষ্ট্রে আপনি ফিরে এসেছিলেন। অজস্র বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হেঁটে আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এই জনস্রোত। দীর্ঘ সাধনার পর আপনি অনন্ত বিস্ময় হয়ে বিশ্বকে আলোকিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কণ্টকাকীর্ণ ছিল আপনার চলার পথ। কিন্তু আপনি বিজয়ী হয়েছেন। অনন্ত বিস্ময় হয়ে গোটা বিশ্বকে আলোকিত করছেন। একের পর এক সম্মাননা, পদক হাতে নিয়ে আপনি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছেন। আপনি যে উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছেন তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। আপনার বিচক্ষণতায় আজ গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আপনার হাতে অবসান ঘটে স্বৈরশাসন। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির বিধান করে আপনি রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

কাদের বলেন, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আপনি মহাকাশে একখন্ড বাংলাদেশকে স্থাপন করেছেন। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করব ইনশাল্লাহ। আপনার নেতৃত্বে আস্থাশীল থেকে আমরা ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করব। আপনি আমাদের পূর্ব পৃথিবীর সূর্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist