নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জুলাই, ২০১৮

এইচএসসির ফল প্রকাশ

কমল পাসের হার ও জিপিএ-৫

এ বছরের এইচএসসি এবং সমমানের আলিম, এইচএসসি কারিগরি, এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) এবং ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব পরীক্ষায় কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পরীক্ষার ফলাফলের সার-সংক্ষেপ শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) এবং সমমানের আলিম, এইচএসসি কারিগরি, এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) এবং ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষা দেশের আটটি শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাসের হার শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮ হাজার ৪৬৪ জন।

কারিগরি ও মাদ্রাসাসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৮৪ জন ছাত্রী ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৯৪৫টি। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন, শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০০টি এবং কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি ৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এইচএসসিতে আটটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। গত ২ এপ্রিল শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ১৪ থেকে ২৩ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা।

পাসে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। আর বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ছাত্ররা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

ছাত্রীদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এবার ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের পাসের হার ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

অন্যদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ হাজার ৫৮১ জন ছাত্র এবং ১৩ হাজার ৬৮১ জন ছাত্রী। তবে, এবার ছাত্রীদের থেকে ১ হাজার ৯০০ জন বেশি ছাত্র পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছে।

এদিকে, পাসের হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার গুণগত মানের উন্নয়ন করতে চাচ্ছি। এ জন্য আমার কড়াকড়িভাবে খাতা দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় নেওয়া পদ্ধতির প্রশংসা করে পুরো পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই অত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়। এটাকে আরেকটু কমিয়ে আনার ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর এখানে ওই যে নানা ধরনের কথা প্রচার টচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মনোবল না হারিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়।

অন্যান্য বোর্ডের ফলাফল

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সব চেয়ে বেশি। এই বিভাগে মোট পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৬। পাসের হারের ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। পাসের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। আর দিনাজপুর বোর্ড থেকে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী পাস করেছে।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৭০ দশমিক ৫৫ শতাংশ পাসের হার নিয়ে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। আর দিনাজপুর বোর্ডের ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ পাসের হার সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বিদেশের সাত কেন্দ্রে পাস ৯২.২৮%

ঢাকা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সাতটি বিদেশ কেন্দ্রে এ বছর পাসের হার ৯২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এই কেন্দ্রগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন শিক্ষার্থী। এবার বিদেশ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে মোট ২৮৫ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করেছে ২৬৩ জন। বিদেশের এসব কেন্দ্রে গত বছর পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৬ জন।

মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার সর্বোচ্চ

এ বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার সর্বোচ্চ। এবার সারা দেশে গড় পাসের হার যেখানে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গতবার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫।

রাজশাহী বোর্ডে পাস ৬৬.৫১ শতাংশ

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৩৮ শিক্ষার্থী। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে এবারের ফল গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫ হাজার ২৯৪ শিক্ষার্থী। তবে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে বগুড়া। বগুড়ার কলেজগুলো থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭১ দশমিক ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা খারাপ করেছেন। তাই সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ফলে প্রভাব পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist