হাসান ইমন

  ১৯ জুলাই, ২০১৮

রাজস্ব আদায়

লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ ঢাকা দক্ষিণ সিটি

সদ্য শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব আদায় ৫৬ থেকে ৬৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত তিন অর্থবছরের সংস্থার বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর বাজার সেলামি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, হোল্ডিং ট্যাক্স ও বিজ্ঞাপন খাতে আয়ের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তার বড় অংশই অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব আয় সম্ভব হচ্ছে না।

সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই রাজস্ব আদায়ে সিটি করপোরেশণের পক্ষ থেকে দীর্ঘ প্রচারণা ও হুঁশিয়ারিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্চে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি সংস্থাটি। জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হোল্ডিং ট্যাক্স। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে করপোরেশন। গত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে দেখা যায়, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১৫ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা। আদায়ের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা কম হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে ডিএসসিসি।

এছাড়া ডিএসসিসির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ঘাটতি থাকে বাজার সেলামি খাতেও। গত দুই অর্থবছরে বাজার সেলামির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১৩ কোটি টাকা। সংস্থাটি আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৪৮ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজার সেলামি আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬৫০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজার ভাড়া আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করেছে মাত্র ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আয় হয়েছে ৬৪ কোটি টাকা। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পরিকল্পনার চেয়ে রিকশা লাইসেন্স ফি আদায় হয়েছে বেশি। গত অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর আদায় হয়েছে ৪ কোটি টাকা। একই অবস্থা বিজ্ঞাপন করেও। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছে ডিএসসিসি। গত অর্থবছরে বিজ্ঞাপন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রমোদ কর আদায় করতে পারেনি সংস্থাটি। গত অর্থবছরে প্রমোদ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ লাখ। আর

আদায় হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। বাস/ট্রাক টার্মিনাল থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি টাকা। সংস্থাটি আদায় করতে পেরেছে মাত্র ২ কোটি টাকা। পশুর হাট ইজারা বাবদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ১ লাখ টাকা। আর ইজারা বাবদ আয় হয়েছে ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকা। প্রসঙ্গত গত বছর ডিএসসিসি ১৫টি পশুর হাটের মধ্যে মাত্র ৯টি হাট ইজারা দিতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৬টি হাট খাস আদায়ের জন্য দেওয়া হয়নি।

ইজারা (টয়লেট, ঘাট, কাঁচাবাজার ইত্যাদি) গত অর্থবছরে আদায় হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া জবাইখানা বাবদ আদায় হয়েছে ৪ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ লাখ টাকা কম। রাস্তা খনন ফি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ কোটি টাকা কম টাকা আদায় করতে পেরেছে সংস্থাটি। যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শিশু পার্ক থেকে আদায় হয়েছে ৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন ফরম বিক্রি বাবদ আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কবরস্থান/শ্বশান ঘাট থেকে আদায় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সম্পত্তি হস্তান্তর বাবদ কর আদায় করেছে ৭৩ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার বলেন, রাজস্ব সংক্রান্ত কাজে নানা ধরনের অস্বচ্ছতা থাকে, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বয়ংক্রিয় ডাটাবেস হওয়ায় যে কেউ ঘরে বসে তাদের ট্যাক্স হিসাব করতে পারবেন। স্বয়ংক্রিয়করণের ফলে রাজস্ব দাতা ও গ্রহীতা দুই পক্ষই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে আসবে। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, কয়েকটি সরকারি সংস্থার কাছে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব পাওনা রয়েছে। হোল্ডিং মালিকরা মামলা করে বড় অঙ্কের টাকা আটকে রেখেছেন। শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়া বাকিগুলোর কয়েকটিতে পরিকল্পনার চেয়ে বেশি এসেছে। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু কয়েকটি বিভাগে আটকে গেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist