ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৮ জুলাই, ২০১৮

রাশিয়া বিশ্বকাপ ও বিশ্ব রাজনীতি

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপ। ১৪ জুন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে পর্দা উঠেছিল ফুটবলের ২১তম আসরের। ঠিক এক মাস পর ১৫ জুলাই একই মঞ্চেই পর্দা নামে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর। লুঝনিকির বৃষ্টিভেজা ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। শেষপর্যন্ত ক্রোয়াটদের হৃদয় ভেঙে দুই দশক পর আরেকবার শিরোপা উৎসব সেরেছে ফরাসিরা। আনন্দ ও বেদনা নিয়ে দুই দেশই গত পরশু ফিরে গেছে ঘরে।

রাশিয়া বিশ্বকাপ এবার অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকল। এই বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো দেখা গেছে ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) ব্যবহার। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ম্যাচ রেফারিদের ভূমিকা। সেইসঙ্গে বড় তারকারদের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স এবং আন্ডারডগ দলগুলোর দাপটে পরাশক্তিদের বিদায়ও অনেকদিন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে থাকবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে ছিল প্রতিটি দলের হার না মানা লড়াই।

খেলাটা কেবল যে মাঠে হয়েছে তা নয়, উত্তপ্ত ছিল মাঠের বাইরেও। খেলার সঙ্গে অনেকে রাজনীতি মেশাতে রাজি নন। তবে রাজনীতিও যে খেলার অংশ, তা স্বীকার করে নিতে হবে আজকের বিশ্ব রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে। কারণ, যা কিছু আন্তর্জাতিক তার মধ্যে ভূমিকা রয়েছে রাজনীতিরও।

বিশ্বকাপে নিজ দেশের ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে অনেক সময় ভিআইপি গ্যালারিতে দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টদের। ফাইনালেও উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার কিতারোভিচ। দুজনই ভিআইপি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে। তার মধ্যে টিভি ক্যামেরাটা বারবার খুঁজে ফিরেছে কিতারোভিচকে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য নিয়ে বিশ্বকাপের তারকাখ্যাতিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। অথচ তিনি রাশিয়া এসেছিলেন কূটনৈতিক উদ্দেশে। বৈঠক করেছেন পুতিনের সঙ্গে। তার মধ্যে আবার যোগ দিয়েছেন ব্রাসেলসের ন্যাটো সম্মেলনে।

এমনিতে নেতিবাচক ধারণা আছে কমিউনিস্ট শাসিত রাশিয়া নিয়ে। ইউক্রেন আক্রমণ, সিরিয়ার আগ্রাসন, জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ, যুক্তরাষ্ট ও ফ্রান্সের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নিয়ে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল রাশিয়া। তবে ভুলে গেলে চলবে না তাদের একজন ‘অলরাউন্ডার’ পুতিন আছেন। বলতে গেলে বিশ্বকাপ আয়োজন করে সব সমালোচনাকে ধামাচাপা দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে উত্থান ঘটিয়েছেন রাশিয়ার ফুটবলেরও, যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য জোর প্রচারণা চালাতে থাকেন পুতিন। তার জন্য জুরিখেও গিয়েছিলেন তিনি। ফিফা কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল পরে। ঘুষের কারণে ফিফা প্রেসিডেন্ট পদেও পরিবর্তন এসেছিল। তবে এসব কিছু যে পুতিনকে দমাতে পারেনি, তা তো হাতেনাতেই প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্বকাপের শুরুতেই বর্ণবাদ নিয়ে অনেকে ভয়ের মুখে ছিলেন। কারণ রাশিয়া সমর্থকরা যে কতটা ভয়ানক, তা ২০১৪ সালে সোচিতে আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিকেই দেখা গেছে। কিন্তু বিশ্বকাপে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। তার জন্য ধন্যবাদ পাবেন পুতিন। কিন্তু ফাইনালের দিন পুরো আয়োজনকে কিছুটা কলঙ্কও সইতে হয়েছে। চারজন ‘রায়ট প্রোটেস্টার’ নেমে এসেছিলেন মাঠে। তবে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা পুতিনের ভ্রুকে সামান্য কুঞ্চন করতে পেরেছে।

দুই ব্রিটিশ গুপ্তচরকে হত্যার কারণে আসরের শুরুতে ব্রিটিশ সমর্থিত কিছু দেশ বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু পুতিনের জাদুকরীতে ঠিকই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে দেশগুলো। যদিও বাইরের রাজনীতিটা ঠিকই প্রভাব ফেলেছিল মাঠে। সার্বিয়ার বিপক্ষে গোল করার পর ‘রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত’ উদ্যাপনের জন্য জরিমানা গুনতে হয়েছে সুইজারল্যান্ডের জাদরান শাকিরি ও গ্রানিত জাকাকে।

মূলত বিশ্বকাপের ভেতর দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন একটি ‘ইমেজ’ তৈরি করতে পেরেছেন পুতিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সৌদি আরবের যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে খেলা দেখার পাশাপাশি হয়তো আলোচনা করেছেন কূটনৈতিক বিষয়েও। তেমনি ফাইনালের দিন উপস্থিত দশ দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও হয়তো কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির হালচাল নিয়ে। কারণ, ফাইনালের দুই দিন পরই তিনি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে গিয়ে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist