ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বকাপে ফের ফরাসি বিপ্লব
স্বপ্নভঙ্গ ক্রোয়েশিয়ার (ফ্রান্স ৪ - ২ ক্রোয়েশিয়া)
রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু থেকেই উপহার দিয়ে এসেছে একের পর এক বিস্ময়। রাশিয়ার রঙ্গমঞ্চের গায়ে কেতাবি নাম হিসেবে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল ভুতুড়ে তকমা। যেখানে মহাবিস্ময়ের নাম ক্রোয়েশিয়া। রীতিমতো রূপকথার দল হয়ে উঠেছিল ক্রোটরা। কিন্তু প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জেতা হলো না তাদের। কাল মডরিচ-রাকিটিচদের কাঁদিয়ে স্বপ্নের শিরোপা জিতে নিলেন গ্রিজম্যান-পগবা-এমবাপ্পেদের তারুণ্যে ঠাসা ফ্রান্স। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ফরাসিরা। আর তাতেই ২০ বছর পর ফুটবল মহাযজ্ঞে আবারো দেখা গেল ফরাসি বিপ্লব। ফরাসি সৌরভে আরেকবার মোহিত হয়ে উঠল ফুটবল দুনিয়া।
ঠিক যেন ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি। আরো একবার বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখল গোলবন্যা। ৬ গোলের ফাইনালে সেদিন পশ্চিম জার্মানিকে কাঁদিয়ে স্বপ্নের প্রথম শিরোপা জিতেছিল ইংল্যান্ড। জিওফ হাস্টের হ্যাটট্রিকে সেদিন হৃদয় ভেঙেছিল জার্মানদের।
চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ লড়াই দেখল ৬ গোলের থ্রিলার। যেখানে কেউ হাস্ট হয়ে উঠতে পারেননি। ফ্রান্সের এই দাপুটে জয়ে কারোর নেই একের বেশি গোল। এই আসরের উদীয়মান সেরা কিলিয়ান এমবাপ্পে, পল পগবা ও অ্যান্তনি গ্রিজম্যান দলের ৪ গোলের একটি করে করেছেন। যদিও ফরাসিদের গোলবন্যার সূচনাটা হয়েছিল উপহার সূচক আত্মঘাতী গোলে!
যার গোলে সেমিফাইনাল বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের মঞ্চে নাম লিখিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া, সেই মারিও মান্দজুকিচই লুঝনিকির মঞ্চে হাজির হলেন খলনায়ক হিসেবে। ১৮ মিনিটে গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিক বিপদমুক্ত করতে গিয়ে মাথা ছুঁয়ে নিজেই বল জড়িয়ে দেন জালে। আর তাতেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখল আত্মঘাতী গোল। তখনই উচ্ছ্বাসের
নীল ঢেউ ওঠে মস্কোর গ্যালারিতে।
৬৯ মিনিটে সেই ভুলের শাপমোচন করলেন মান্দজুকিচ ফ্রান্সের জাল কাঁপিয়ে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ার। ৪-২ গোলে পিছিয়ে এক রকম ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে ক্রোটরা। নকআউট পর্বের আগের তিন ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ জিতলেও এদিন আর শেষ রক্ষা হলো না মডরিচ-রাকিটিচদের।
তবে আত্মঘাতী গোলে শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছিল ক্রোয়েশিয়া। ২৮ মিনিটে ইভান পেরিসিচের দুর্দান্ত এক গোলে সমতায় ফেরে ক্রোটরা। ম্যাচটার রোমাঞ্চ বৃহস্পতির তুঙ্গে উঠবে এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। গোলের পর গোল, আক্রমণের জবাবে পাল্টাআক্রমণ। এর মধ্যেই ৩৮ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো লিড নেয় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে এই বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থতম গোলটি করেন গ্রিজম্যান।
ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনাল জয়ের আরেক নায়ক ইভান পেরিসিচের ভুলে এবার এগিয়ে যায় ফরাসিরা। ডি-বক্সে তার হাতে লেগে যায় বল। পেনাল্টির জোরালো আবেদন ফরাসিরা। আর্জেন্টাইন রেফারি পিতানা ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারিংয়ের ব্যবহার করেন। সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত জানান তিনি। স্পটকিক থেকে ড্যানিয়েল সুবাসিচকে বোকা বানান গ্রিজম্যান। এই গোলটিই মূলত শিরোপা থেকে ক্রোটদের নিয়ে যায় আলোকবর্শ দূরে।
"