পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি

  ১৫ জুলাই, ২০১৮

রূপপুর প্রকল্পে উদ্বেগের কিছু নেই : প্রধানমন্ত্রী

পাবনার জনসভায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্পর্কে কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান এই প্রকল্পে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তার দিকটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। রাশিয়ার সর্বশেষ থ্রি প্লাস জেনারেশনের রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে। রাশিয়া এই প্রকল্পের বর্জ্য নিয়ে যাবে।’ গতকাল শনিবার পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে কংক্রিট ঢালাইকাজ উদ্বোধন করে তিনি এই আশ্বাসবাণী দেন। রূপপুরের অনুষ্ঠান শেষ করে সড়কপথে পাবনা যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে পুলিশ লাইনের জনসভায় যোগ দেন তিনি।

‘কোনো কাজ করতে গেলে অনেক কথা হয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে উদ্বেগের কিছু নেই। এক্ষেত্রে রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশের জনবলকে প্রশিক্ষিত করছে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা, শনিবার দ্বিতীয় চুল্লীর নির্মাণকাজ শুরু হলো।

সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট।

রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রথম পর্যায়ের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

রূপপুরের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর তৈরি হচ্ছে থ্রি প্লাস প্রযুক্তি দিয়ে। আর বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে, সে দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। এদিক থেকে আমি মনে করি, কারো আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিচালক দোহি হ্যান, রোসাটমের উপমহাপরিচালক আলেকজান্দার রাস্কিনও ও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধনের পর সেখানে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠনে মঞ্চে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি, রাশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী এলিয়া সেস্তাকভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়র স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ এফ এম রুহুল হক, রসাটম ফার্স্ট ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেন্স ম্যানেজমেন্ট), ভারতের পরমাণু শক্তি অথরিটির চেয়ারম্যান ড. অভিলাস ভরদ্বাজ, বাংলাদেশ পরমাণু নিয়ন্ত্রণ অথরিটির চেয়ারম্যান নঈম চৌধুরী, বাংলদেশ পরমাণ শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক।

আ.লীগ ক্ষমতায় থাকলে সব গ্রাম শহর হবে : প্রতিটি গ্রামকে নগরের সুবিধায় গড়ে তোলার অঙ্গীকার দিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে চাইতে হবে না, আওয়ামী লীগ জানে মানুষের কীভাবে উন্নয়ন হবে। এ বছরের ডিসেম্বরেই ইলেকশন হবে। ইলেকশনে আপনারা যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসে; তাহলে প্রতিটি গ্রামকে নগরের মতো উন্নয়ন করে দেব। নগরের মতো সুবিধা পাবেন।’ শনিবার পাবনা জেলা শহরে পুলিশ লাইনস মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার ভাষণে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

দুপুরে পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ উদ্বোধন শেষে বিকেলে জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাবনার অর্ধশত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কারণ শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করি, দেশের উন্নয়নটা কীভাবে হয়।’

মাদক-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মগুরুসহ সমাজের সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ লুটপাট আর নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসেনি। আমরা আসি আপনাদের ভাগ্য গড়তে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান করে যচ্ছি। আপনাদের কাছে সাহায্য চাই। মা-বোনেরা, ভাইয়েরা আছেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আছেন, শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ প্রতিটি ধর্মের যারা আছেন তাদের কাছে আমার আবেদন, তরুণরা যেন বিপথে না যায়। কারণ মাদক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মসজিদের ইমাম সাহেবসহ প্রতিটি ধর্মের ধর্মগুরু যারা আছেন তাদের বলব, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কেউ যেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের দিকে না যায়; সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য এবং সবাইকে এক হয়ে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’

ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর সভাপতিত্বে জনসভায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকও বক্তব্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist