আমির হোসেন
সবার চোখ মস্কোতে
বিশ্বকাপ হলো এক বিরাট মিলন মেলা। যেখানে অংশ নেওয়া ৩২টি দেশের নাগরিকরা তো আসেনই, আসেন অন্যান্য দেশের ফুটবল ভক্ত, সংগঠক, ক্রীড়ামোদি, সাংবাদিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। সবার আগমনে বিরাট এক মিলন মেলায় রূপ নেয় বিশ্বকাপ। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলে সবাই বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় মাতোয়ারা হন। উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় ভেন্যুগুলো। যা চলে মাসব্যাপী।
দেখতে দেখতে শেষের দ্বারপ্রান্ত পৌঁছে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আর মাত্র দুটি ম্যাচ। এরপরই পর্দা নামবে বিশ্বকাপের। ভাঙবে মিলন মেলা। থেমে যাবে নানার রঙের আলোর ঝর্ণাধারা। নিভে যাবে আতশবাজির ঝলকানি। নানান দেশের নানান বর্ণের মানুষের কোলাহল-কলরব থেমে যাবে। উৎসবের নগরীতে নামবে নীরবতা। আর দশটি মাসের মতো স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করবে।
তবে বিশ্বকাপের শেষটা রাঙিয়ে তুলতে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। ১৫ জুলাই মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হবে ফাইনাল। যেখানে সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন যুক্তরাষ্ট্রের মেগাস্টার অভিনেতা উইল স্মিথ। তার সঙ্গে গাইবেন স্বদেশি নিকি জ্যাম ও কসোভোর গীতিকার ও শিল্পী ইরা ইস্তেরেফি। ফাইনালের জন্য তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। সাজ সাজ রব বিরাজ করছে মস্কোতে। তুলির শেষ ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠছে মস্কোর অলি-গলি, আনাচ-কানাচ, ক্রেমলিন, রেড স্কয়ার। শেষের উৎসব আর আমেজটুকু উপভোগ করছেন ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের ফুটবল ভক্তরা। যেসব স্বেচ্ছাসেবী এতদিন বিভিন্ন ভেন্যুতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তাদের অনেকেই এখন উপভোগ করেছেন। উপভোগ করছেন রাশিয়ানরা।
ফাইনাল উপভোগ করতে প্রতিদিনই ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া থেকে ফুটবল ভক্তরা রাশিয়ায় আসছেন। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। তাই তাদের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই। তাদের জন্য মঞ্চটাও বড়। তাইতো দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীরা। তারা নাচছেন, গাইছেন, জানান দিচ্ছেন ক্রোয়েশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। ফ্রান্স এর আগে ফাইনাল খেলেছে। তবে সেটা ২০ বছর আগে। ফ্রান্সের তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের তখন জন্মও হয়নি। তাদের সামনে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি।
ক্রোয়েশিয়া অবশ্য নজির স্থাপন করেই ফাইনালে এসেছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম ক্রোয়েশিয়া নকআউট পর্বের তিন ম্যাচেই প্রথমে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নিয়েছে এবং পৌঁছে গেছে ফাইনালে। শেষ ষোলোতে ডেনমার্কের বিপক্ষে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে। তারপর সমতা ফেরায়। এবং টাইব্রেকারে জয় পায়। কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়ার বিপক্ষে ৩১ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে। ৩৯ মিনিটে গোল শোধ দেয়। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে এগিয়ে যায় তারা। ১১৫ মিনিটে আবার সমতা ফেরে। সেখান থেকে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে আসে। সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে। এরপর ৬৮ মিনিটে সমতা ফেরায়। আর ১১৫ মিনিটে গোল করে জয় নিশ্চিত করে। ক্রোয়েশিয়া হলো ফাইনালে ওঠা ১৩তম দেশ। আর শিরোপা জিতলে তারা হবে বিশ্বকাপ জয়ী নবম দেশ। আগের ২০টি শিরোপা ৮টি দেশ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এবার সেই তালিকায় নাম ওঠানোর সুযোগ ক্রোয়েশিয়ার সামনে।
মস্কোর উৎসবের মঞ্চে শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠবে শিরোপা সেদিকেই তাকিয়ে গোটা ফুটবল বিশ্ব।
"