নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে রক্তনালির চিকিৎসায় মাত্র ২০ বিশেষজ্ঞ
২০১৪ সালে গ্যাংরিনের অসহ্য ব্যথায় আক্রান্ত আরমান আলীর বাম পা কাটা হয় পঙ্গু হাসপাতালে। একইভাবে চার বছর পর ডান পায়ে তীব্র ব্যথা ও কালো হতে থাকা পায়ের আঙুল নিয়ে এবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন আরমান। বাম পায়ের আরটারিতে ১০০ ভাগ ব্লক ধরা পড়ায় এবার পা না কেটে বাম পায়ের রক্তনালিতে রিং লাগিয়ে দেন চিকিৎসক। এতে পা কাটার পরিবর্তে কোনো সার্জারি ছাড়াই সুস্থভাবে হাঁটাচলা করতে পারছেন আরমান। আরমান বলেন, ‘ঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় আমার পা কেটে ফেলা লাগেনি।’
রোগীদের পাশাপাশি অনেক চিকিৎসকও জানেন না, হার্টের মতোই হাত বা পায়ে রিং পরানোর মাধ্যমে কম খরচে বন্ধ রক্তনালি খুলে দেওয়া সম্ভব। জানা গেছে, দেশের মাত্র পাঁচটি হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক নিয়ে চলছে ভাসকুলার সার্জারি। রাজধানীকেন্দ্রিক এই সার্জারির চিকিৎসার জন্য মাত্র ৫০টি বেড বরাদ্দ। অথচ, সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর রক্তনালি ব্লক হয়ে হাত-পা হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সারা দেশে এই সেবা সহজলভ্য করা না গেলে হাত ও পা হারানো মানুষের সংখ্যা বহু গুণ বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এফসিপিএস ডিগ্রি নেওয়া চিকিৎসকদের তিন মাসের ভাসকুলার সার্জারির প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও দেশের ইমার্জেন্সি কেসগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী ডা. মহসিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের ধারণা শুধু হার্টে ব্লক হয়। তাই এর জন্য চিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু কিডনি বা হাত-পায়ের জন্য খুব কম মানুষই চিকিৎসকের কাছে যায়।’
রক্তনালির ব্লকের জন্য দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের হাত বা পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। অথচ, এই রোগের আধুনিক চিকিৎসার জন্য দেশে রয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২২ জন চিকিৎসক। তাই হাত পা অক্ষত রেখেই এসব রোগীদের সুস্থ করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজধানীর বাইরে এই চিকিৎসাসেবা ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মোহাম্মদ বাশার বলেন, ‘কিছুদূর হাঁটলে পায়ে ব্যথা অনুভব করছেন, এ জন্য রক্তনালি বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।’
পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা হাসপাতালে এই সেবার সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা বললেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান। ছিনতাকারীর ছুরিকাঘাত, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় আহতদের অধিকাংশরা রক্তনালি বিচ্ছিন্ন হয়ে তাৎক্ষণিক বা পরে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। আক্রান্তদের নাগালের মধ্যে রক্তনালির চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হলে এদের বেশির ভাগকেই শরীরের অঙ্গ অক্ষত রেখে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করা সম্ভব।
"