ক্রীড়া ডেস্ক
ক্লাসিক্যাল জার্মানি
জার্মানি ২ - ১ সুইডেন
আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, গোলপোস্টের নাটকীয়তা, গোলরক্ষকদের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, ফরওয়ার্ডদের ধারাবাহিক সুযোগ হাতছাড়া এবং লাল কার্ড। একটি আদর্শ ফুটবল ম্যাচের প্রায় সব উপদানই ছিল জার্মানি-সুইডেন ম্যাচে। কাল রোস্টভ এরিনায় নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচটায় শেষ হাসি হাসল জার্মানরাই। দশজনের দলে পরিণত হলেও ইনজুরি টাইমে দেখা মিলল ক্লাসিক জার্মানির। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য এক ফ্রি-কিকে বেঁচে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। জার্মানদের বড্ড বাঁচা বাঁচিয়ে দেন টনি ক্রুস। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি গোলে শট নেননি রিয়াল মাদ্রিদ প্লে-মেকার। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মার্কো রিউসকে ছোট পাস দিলেন। রিউস বলটা থামাতেই ট্রেড মার্ক করা ঘূর্ণি শট নেন ক্রুস। তাতেই চূর্ণ সুইডেনের রক্ষণদূর্গ। ২-১ গোলের মহানাটকীয় জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের আশাটা বেঁচে থাকল জার্মানির।
অথচ থ্রিলার ম্যাচটাতে শুরুতে এগিয়ে ছিন সুইডেনই। ৩২ মিনিটে টয়ভোনেন দুর্দান্ত এক শটে জার্মানির জাল কাঁপান। প্রতি আক্রমণে গোলটা করেন সুইডিস তারকা। শুধু এবারই নয়, প্রথমার্ধের বেশ কয়েকটা আক্রমণ করে জার্মানদের রক্ষণদূর্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিল সুইডেন। গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নুয়্যার অতিমানব হয়ে না উঠলে বিরতির আগেই সুইডিশরা এগিয়ে যেতে পারত ৩-০ গোলে। কিন্তু মার্কাস বার্গ-ফর্সবার্গ-লারসনদের হতাশ করেন নুয়্যার। বিরতির আগ মুহূর্তে বার্গের দুর্দান্ত হেডটা তো অবিশ্বাস্যভাবেই রুখে দেন বায়ার্ন মিউনিখের শেষ প্রহরী। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় জার্মানদের ওপর ছড়িয়ে ঘুরিয়েছে সুইডেন। কিন্তু মাচের চিত্রটা পাল্টে গেল দ্বিতীয়ার্ধে। জার্মানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রমণ করা সুইডিসরা বিরতির পর পাল্টে ফেলে খেলার ধরন। হঠাৎই রক্ষণাত্মক কৌশলের আশ্রয় নেয় ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা।
৪৮ মিনিটে দারুণ গোলে জার্মানিকে সমতায় ফেরান মার্কো রিউস। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড স্ট্রাইকার নিজের প্রথম গোলটা পেতে পারতেন বিরতির আগেই। কিন্তু নিশ্চিত গোলে বল পায়েও ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। এই গোলের আগে ও পরে রীতিমতো গোল মিসের মহড়াই দিয়েছেন রিউস।
শুধু রিউস নয়, বেশ কয়েকটা সুযোগ হাতছাড়া করেছেন টমাস মুলার, মারিও গোমেজও। কিন্তু জার্মানদের সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন রবিন ওলসেন। চ্যাম্পিয়নদের কয়েকবারই নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত করেছেন সুইডিস গোলরক্ষক। ম্যাচের অন্তিম প্রহরে তো গোমেজের হেডটা অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিহত করে দেন ওলসেন।
এমনিতেই ওলসেন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার ওপর এমন অগ্নিপরীক্ষার ম্যাচে শুরুতেই আবার ধাক্কা খেতে হয় জার্মানদের। সুইডিস ফুটবলারের বুটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন সেবাস্টেইন রুদি। তবে এর চেয়েও বড় ধাক্কাটা জার্মানি খেয়েছে ম্যাচের ৮২ মিনিটে। অনর্থক মার্কাস বার্গকে পেছন থেকে ট্যাকল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড (লাল কার্ড) দেখে মাঠছাড়া হন জেরমি বোয়াটেং।
কিন্তু দশজনে পরিণত হওয়ার পর সুইডেনের বিপৎসীমায় সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে জার্মানি। যেন মরণকামড় দিচ্ছিল চ্যাম্পিয়নরা। একজন কম জার্মানরা যখন দ্বিতীয় গোলটা কোনোভাবেই পাচ্ছিল না, তখনই ম্যাচে শেষ মিনিটে আশার আলো হয়ে এলো ফ্রি-কিক। তাতেই বাজিমাত। ক্রুস-রিউস দুর্দান্ত রসায়ন! শেষ মুহূর্তে দেখা মিলল ক্লাসিক জার্মানির। এ যাত্রায় বেঁচে গেল চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ষোলোর সুবাস পাওয়া সুইডেনের ভাগ্য উল্টো সুতোয় ঝুলে গেল অন্তিম প্রহরে গোল হজম করে।
তাই টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে আগামী পরশু মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই তাদের সামনে। ওই ম্যাচে মেক্সিকানদের দুই গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে সুইডেনকে। তবে একই দিন দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে জার্মানি হেরে গেলে ড্র করলেও চলবে সুইডিসদের। একইভাবে শেষ ম্যাচে সুইডেন হেরে গেলে শুধু হার ঠেকালেই চলবে জার্মানদের। অথচ দুই ম্যাচ জিতে সবার আগে নক আউট পর্ব প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল মেক্সিকো। এখানেই ডেথ গ্রুপের আসল রোমাঞ্চ।
আজকের খেলা
ইংল্যান্ড-পানামা (সন্ধ্যা ৬টা)
জাপান-সেনেগাল (রাত ৯টা)
পোল্যান্ড-কলম্বিয়া (রাত ১২টা)
"