নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জুন, ২০১৮

ভোটের উত্তাপ শেষ বেলায়

নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে : জাহাঙ্গীর পরিস্থিতি পক্ষপাতদুষ্ট : হাসান

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের বাকি আর মাত্র দুই দিন। প্রচারের জন্য সময় আরো কম। তাই শেষ বেলায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। ছড়াচ্ছে উত্তাপও। আর নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনের ভোটেও হিসাব কষা হচ্ছে বড় দুটি দলের মধ্যেই। তাই প্রচারে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপই বেশি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন খুলনা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আর বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। দুই প্রার্থীর অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়েই চলছে জনসংযোগ, পথসভা, ভোট প্রার্থনা। বিএনপি নাশকতার পরিকল্পনার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের। আর পরিস্থিতিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিএনপির। তবে, আওয়ামী লীগ বলছে, হারার আশঙ্কা থেকেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করা বিএনপির নিয়মে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরে দেশি বিদেশি সবার দৃষ্টি থাকায় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ রাজনীতি বিশ্লেষকদের। এদিকে, রাজনীতি বিভক্ত হলেও এক কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে গাজীপুর, টঙ্গী ও শ্রীপুর থেকে লিখেছেন হাসমত আলী, নাঈমুল হাসান এবং রাজীবুল হাসান।

বিএনপি নাশকতার পরিকল্পনার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের। গতকাল সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে অংশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বিশেষ ব্যক্তিদের নজরদারিতে আনার আহ্বান জানান তিনি। আর নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দির সরকার। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। পরিস্থিতিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ উল্লেখ করে তা আরো খারাপ হওয়ার শঙ্কা তার। প্রধান দুটি দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ঢাকা থেকে গাজীপুরে এসে নিজেদের প্রার্থীদের পক্ষে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রচার চালান। আওয়ামী লীগ ১৪ দলের ব্যানারে ও বিএনপি এককভাবে জনসংযোগ করছে। এদিন দুই প্রার্থী ভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে ভোটারদের কাছে ভোট চান। এদিকে, রাজনীতি তাদের বিভক্ত হলেও এক কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ প্রমাণ করে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।

আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেল জানায়, তাবলীগ জামাতের মুরব্বী এবং সঙ্গীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শেষে প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মহানগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কলাবাগানে পথসভায় বক্তব্য দেন। পরে ২০ নম্বর মজলিশপুর, ২২ এ বাংলাবাজার, ২১ এ বিপ্রবর্থা, ২৩ খালপাড়া পথসভায় ভোট চান। চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ফটকের সামনে পথসভার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা প্রচারণা শুরু করেন। পরে ১৬ এ আক্তার মার্কেট ১৮ তে টি অ্যান্ড টি রোড, শাপলা মেনশন ও অনুপম সুপার মার্কেটে পথসভার মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া তিনি টঙ্গীতে মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথসভায় যোগ দেন।

জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, আমি বলেছি, এই সিটি করপোরেশনের মেয়র সবার জন্য উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। তারা (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ও জাতীয় রাজনীতি যেন এখানে না করে। আমরা স্থানীয় মানুষ, আমরা সব দলের মানুষকে নিয়ে এখানে একসঙ্গে আছি। আমরা সবার উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করছি।

চান্দনা চৌরাস্তা জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মসজিদ আঙিনায় মুসল্লিদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ইসলামিক দল এবং ইসলামিক সংগঠনের যারা আলেম আছেন সকলের সহযোগিতা চেয়েছি। মহানগরীর এক হাজার ৮০০ মসজিদের খতিব, সাড়ে ৪০০ কওমী মাদরাসার শিক্ষক এবং তাবলীগ জামাতের মুরব্বীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাকে নৌকা মার্কায় সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমাকে ভোট দিন, নৌকাকে ভোট দিন। আমি ক্লিন এবং গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই। সবাইকে একটি বাসযোগ্য শহর দিতে চাই।’

পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানকার সমাজব্যবস্থায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রয়োজন আছে। আমি সবার জন্য কাজ করতে চাই। আলেম-ওলামা, স্কুল-কলেজ বিশ^বিদ্যায়ের শিক্ষক, চাকরীজীবী, শ্রমিক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, নারী, যুবক, শিশু সবার উপযোগী একটি প্যাকেজ তৈরি করেছি। আমাকে ভোট দিন। আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলব।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক সকাল থেকে প্রার্থীর সঙ্গে পথসভা এবং গণসংযোগ করেন। কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সকালে টঙ্গীতে এবং চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর প্রচারণা চালান। আর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। ওলামা লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আখতার হোসেন বোখারী মহানগরীর ৪০, ৪১ নং পুবাইল এলাকায় গণসংযোগ করেন। টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা চেয়ারম্যান মাজহুরুল ইসলাম তালুকদার টঙ্গীতে প্রচারণা চালিয়েছেন।

বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেল জানায়, প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বাসন অঞ্চলে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তিনি সকালে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোগরখালে পথসভার মাধ্যমে তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। দুপুরে তিনি টি অ্যান্ড টি কলোনি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও দোয়া চান। এ ছাড়া তিনি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের যোগীতলা নতুন বাজার, চান্দনা মোশারফের স্কুল (দক্ষিণপাড়া), ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ীয়ালী নগপাড়া মন্ডলবাড়ী মসজিদ সংলগ্ন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীম উদ্দিন মার্কেট, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাহাটা রাস্তার মাথা, হকমার্কেট ও কাউন্সিলর ফয়সাল সরকারের অফিস প্রাঙ্গণে পথসভা করেন।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মীর নাসির উদ্দিন, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন।

পথসভায় হাসান সরকার বলেন, এটি সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়, এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তাই জনগণের রায়কে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তিনি গণগ্রেফতার বন্ধ করে ভোটের পরিবেশ নির্বিঘœ করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist