সংসদ প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০১৮

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

মাদকের পৃষ্ঠপোষক ও গডফাদারের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক এবং মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ সংশোধিত আইনে এ ধরনের শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ প্রস্তাব করা হবে। তিনি আরো বলেন, এ আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকেও আইনের আওতায় আনার জন্য মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল বুধবার টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র এমপি মো. রুস্তুম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে এসব তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকালে শুরু হয় অধিবেশন। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ অনুযায়ী মাদক অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। তবে বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যক্তির দখলে-কর্তৃত্বে কিংবা অধিকারে মাদকদ্রব্য পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কম। এর জন্য মাদক ব্যবসায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডরা সহজেই পার পেয়ে যায়।

তাই মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেট চক্রকেও সর্বোচ্চ শাস্তিস্বরূপ সংশোধিত এ আইনে মৃত্যুদ-ের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক আদালত গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক অপরাধীদের তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া হচ্ছে। আর মাদক অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম আলাদা কোনো আদালতের মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে মাদক চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

স্বতন্ত্র এমপির ওই প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, যানবাহন ও মাদক স্পটগুলোতে তল্লাশি অভিযান চলছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হচ্ছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে ভয়াবহ মাদকের প্রতি আকৃষ্ট না হয় সেজন্য মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১৮ মে থেকে শুরু হওয়া চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের বিপুল পরিমাণে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং এগুলো পরিবহনের বাহন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট মোট ১৫ হাজার ৩৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোট ২০ হাজার ৭৬৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে।

সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র ব্লু-ইকোনমি

সমুদ্র সীমানা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছেÑ সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ৩ দশকের বেশি সময় ধরে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিষ্পতি হয়। বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এটি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। ঐতিহাসিক ওই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল লাভ করে, যা মূল ভূখন্ডের আয়তনের প্রায় ৮১ ভাগ সমান। অর্জিত এ সমুদ্র এলাকাকে ঘিরে আমরা সমুদ্র অর্থনীতিকে (ব্লু-ইকোনমি) সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এর ব্যাপ্তি বিশাল। তাই এ সমুদ্র অর্থনীতিকে ঘিরে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি; যার মধ্যে আমার কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মোট ২০ জন সদস্যের সমন্বয়ে ‘সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয়’ একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সফল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত

আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমরা বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই আর্থসামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে গেছে। আগের ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকারের বর্তমান আমলেও উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের যে, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যা স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি মানদ- পূরণ করেছে। অপরদিকে বিশ্ব ব্যাংকের উন্নয়ন মানদ-ে ২০১৫ সালেই আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছি। এ উত্তরণের ফলে আমাদের চাহিদা ও সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ত হওয়ার পথ আরো সুগম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বে যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয় হয়েছে তা এই অর্জনের মাধ্যমে আরো সৃদৃঢ় হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে ও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে স্বীয় অবস্থান যথাযথভাবে তুলে ধরে আমরা আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে আমরা জাতির জনকের সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।

চীনের সহায়তায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন

চীন সরকারের সহায়তায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সেলিনা বেগমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি সংসদে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে চীন সরকারের সহায়তায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র বেসিনে বন্যা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য প্লানিং ফর ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, বিগত ৯ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ভিপিএফ খাতে ২০ লাখ ২৩ হাজার ২৭৬ দশমিক ৭৩৪ মেট্রিক টন শস্য ও ৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭২টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকায় আগাম বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষা তথা সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কালনী-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থাপনা’, ৫৮৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ ও ৯৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হাওর বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলোর আওতায় বিদ্যমান ডুবন্ত বাঁধগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধিসহ হাওর এলাকার নদ-নদীগুলোর ড্রেজিং এবং অভ্যন্তরীণ খালগুলো পুনঃখননের কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদীসহ (৫৪টি ভারত থেকে এবং ৩টি মিয়ানমার থেকে) সর্বমোট ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষকালে সংঘটিত হয়। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনের পানি প্রবাহের সঙ্গে নেমে আসা বিপুল পরিমাণ পলি নদ-নদী ও অন্যান্য জলাধারগুলোর পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ভরাট করে ফেলে। ফলে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist