জুবায়ের চৌধুরী

  ২০ জুন, ২০১৮

গোপনে সংঘটিত হচ্ছে

নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনা জঙ্গিদের!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। দুই বছর আগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা জঙ্গি তৎপরতা কমে আসার মধ্যেই নতুন করে সংগঠিত হওয়ার নমুনা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে জঙ্গি ইস্যু নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পলাতক ও নতুন সংগঠিত জঙ্গিদের বিষয়ে নতুন করে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সম্প্রতি পুরনো জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে বলে নমুনা পেয়েছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। বছরের মাঝামাঝি থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নাশকতার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। এ জন্য গোপনে নতুন সদস্য ও তহবিল সংগ্রহসহ টার্গেট নির্ধারণের কাজ করছে তারা। বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকায় গ্রেফতার জঙ্গিদের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও সাবেক সিপিবি নেতা শাহজাহান বাচ্চু হত্যায় দুই মোটরসাইকেলে এসে চারজন কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এ হত্যাকান্ডের আলামত এবং আগে হুমকির কারণে ঘটনাটি আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা ঘটিয়েছে বলেই ধারণা তদন্তকারীদের। আর বর্তমানে জঙ্গিরা তহবিল সংগ্রহে ডাকাতি-ছিনতাই করছে বলেও তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে। সম্প্রতি ঢাকা, রাজশাহী ও গাজীপুরে অন্তত ১৫টি ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বগুড়া থেকে উদ্ধার জঙ্গিদের দুটি চিঠিতে নির্বাচনের আগে নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তথ্য মিলেছে।

সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ বগুড়া থেকে জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে রাকিব, আবু বক্কর ওরফে সীমান্ত ও ইব্রাহিম ওরফে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়। আবিরের কাছে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাদের উদ্দেশে অন্য এক জঙ্গির লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার দুটি চিঠি পাওয়া যায়। ওই চিঠি জেএমবির শীর্ষ আমির সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে দাদা ভাইয়ের উদ্দেশে লেখা। চিঠিটি জঙ্গি নেতা ইয়ামিন ওরফে শহীদুল্লাহর মাধ্যমে সালেহীনের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে তা গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ খুন করে প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া সালেহীন বর্তমানে ভারতে থেকে পুরনো জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পালিয়ে থাকা আরেক জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান জামাতুল মুজাহিদিন চালাচ্ছেন ইন্ডিয়া (জেএমআই)। দুটি চিঠি কারাগারে বসে লিখেছেন সজল (ছদ্মনাম) নামের এক জঙ্গি। চিঠিতে সজল লিখেছেন, ‘অ্যামুনেশন সংগ্রহে তৎপর হওয়া দরকার। সামনে নির্বাচন। বিভিন্ন রকম সহিংসতা হবে। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার।’ চিঠিতে গত ১৩ নভেম্বর ছয়জনের নামে ১৫ হাজার, ১৫ ডিসেম্বর তিনজনের নামে ১৫ হাজার, ৮ জানুয়ারি তিনজনের নামে ১৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে জঙ্গিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ ছাড়া গত ১২ জুন কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান হুমায়রা ওরফে নাবিলা। প্রায় একই সময়ে আরো অন্তত পাঁচজন জঙ্গি জামিনে বের হয়ে গেছেন। একজন বাদে বাকি চার জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩০০ জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে তারা জঙ্গিদের সংগঠিত করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ২ জুন থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে প্রায় ৩০০ জন জঙ্গি সদস্য জামিনে মুক্তি পায়। এদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার আসামি। জামিনে মুক্ত জীবনে তারা আবারও জঙ্গিবাদে যুক্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকেই কারাবন্দি অবস্থায় অন্য শীর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শে থেকে নতুন করে জঙ্গিবাদের তালিমও নিয়েছেন। তাই জামিনে বেরিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা আরো ভয়ংকর রূপে ফিরছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে গত মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের ওপর হামলা মোকাবিলায় সতর্ক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে সুনির্দিষ্ট জঙ্গি হামলার আশঙ্কা না থাকলেও জঙ্গিরা ফের পুনঃসংগঠিত হতে চাইছে। এ কারণে সব ধরনের সতর্ক নজরদারি রাখা হচ্ছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, গত মাসের মাঝামাঝিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে জঙ্গিদের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এতে বলা হয়, জঙ্গিরা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। একই সময় পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ইউনিটকে জঙ্গি নাশকতার ব্যাপারে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জঙ্গিদের পরবর্তী টার্গেটের মধ্যে পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে সতর্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনার পর পুলিশ সতর্কতা বাড়িয়েছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও র‌্যাব। এ ছাড়া গত দুই বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে হাজার হাজার জঙ্গি গ্রেফতার ও শীর্ষস্থানীয়সহ শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধশত জঙ্গি আস্তানা।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জঙ্গিরা সব সময়ই পুনঃসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। সেভাবেই এখন সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। জঙ্গিদের আগের মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই। অভিযানে অনেক নেতা ধরা পড়েছে, অনেকে মারা গেছে। বড়দের অনুপস্থিতিতে ছোটরা নেতৃত্বে চলে আসছে। নতুনরাই সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে। জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist