কক্সবাজার প্রতিনিধি
ঈদে অতীত স্মৃতি কাঁদাল রোহিঙ্গাদের
বাংলাদেশ সরকার ও এনজিও সহায়তায় ঈদে পরনে ছিল নতুন কাপড়। রান্না হয়েছিল মিষ্টিজাতীয় খাবার। ঈদে কাপড় কিংবা খাবার অভাব ছিল না। কিন্তু নিজ মাতৃভূমিতে নামাজ আদায় করতে পারেনি। নিজ দেশ থেকেও মিয়ানমার সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনের ভয়ে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠী হিসেবে ঈদ উৎসব পালন করল কক্সবাজারে।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বয়স ২৬। সব সময় ঈদের নামাজের পর বাবার সঙ্গে স্থানীয় কবরস্থানে স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে যেতাম। কিন্তু পোড়া কপাল, সেই বাবাকেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তার লাশ কবর না দিয়েই পালিয়ে এসেছি এ দেশে। আমাদের দুধ, চিনি, সেমাই কিংবা নতুন কাপড়ের দরকার নেই। আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি ফিরে আসুক। ফিরে যেতে চাই নিজ ভূমিতে। যেখানে শুয়ে রয়েছে বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন।’ কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দলনেতা জাফর আলম বলেন, ‘গত বছর ঈদ দেশে করেছি। সেখানে রাষ্ট্রীয় সুবিধা পায়নি, এটা সত্যি। তবে উৎসবের আমেজ ছিল অন্যরকম। এরপর আমাদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। জীবন বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছি। সেই থেকে আমাদের খাবার, থাকার জায়গা কিংবা পরিধেয় বস্ত্র নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। সবদিক দিয়েই এখানে ভালো আছি। তবে নিজ মাতৃভূমির ফেলা আসা স্মৃতির কথা মনে পড়ছে।’
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ২০ জন মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে ও বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করে ঈদের নামাজে দোয়া প্রার্থনা করা করেছে তারা।
কুতুপালং মধুরছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি কলিমউল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের অনেক স্বজনকে হত্যা করেছে। কিন্তু নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো সুরাহা হয়নি। মাঝে মধ্যে শুনি আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু কবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কারো কোনো কথা নেই।’
কুতুপালং ডি-ব্লকের মাঝি আবুল কালাম বলেন, ‘ফেলে আসা ভয়ংকর সেই স্মৃতি উৎসবের দিনেই বেশি মনে পড়ে। আমরা চাই না সেই স্মৃতি আমাদের শিশুদের মনেও গেথে থাকুক। তাই ঈদ উপলক্ষে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের খেলার মাঠে শিশুদের আনন্দ দিতে বসানো হয়েছে কয়েকটা নাগরদোলা আর বেশ কয়েকটা দোকান।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের ঈদ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি মক্তবে ঈদের নামাজ আদায় করেছে রোহিঙ্গারা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, টেকনাফের ক্যাম্পের আড়াই শতাধিক মসজিদ ও মক্তবে ঈদ জামাত আদায় করেছে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ঈদ উৎসব অনেকটা আনন্দে কেটেছে তাদের। তবে তারা নিজ দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু করা দরকার।
"