নিজস্ব প্রতিবেদক
শান্তি সমৃদ্ধি সম্প্রীতি কামনায় ঈদ উদ্যাপন
দেশ ও জাতির শান্তি, সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ কামনায় গত শনিবার সারা দেশে মুসলমানদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হয়েছে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে ভোর থেকেই ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদগাহ ময়দানে আসতে থাকেন। নতুন পোশাক আর নানা সুগন্ধিতে ভোরের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এক অমলিন মুগ্ধতা। নিñিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়েছে। এ বছর এই ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের ১৯১তম জামাত সকাল ১০টায় হয়। এতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদ উদ্যাপনের খবর পাঠিয়েছেন ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরাÑ প্রধান জামাত : রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিদেশি কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন।
জাতীয় ঈদগাহের প্রতিটি প্রবেশ পথেই ছিল নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নামাজ শুরুর অনেক আগেই মুসল্লিতে ভরে যায় ঈদগাহ। নামাজের আগে বয়ানে ঈদের তাৎপর্য তুলে ধরেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারবন্দি হয়ে সবাই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। পরে মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। মোনাজাত শেষে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : এর আগে সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১ ঘণ্টা পর পর ৪টি জামাত হয়।
মসজিদ ছাড়িয়ে সামনের রাস্তায় বিস্তৃত হয় জামাত। হাজার হাজার মুসল্লির নামাজ শেষে এখানেও মহান আল্লাহর কাছে নিজের ও দেশের মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এবার মোট ৪০৯টি স্থানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান জামাতসহ ঈদুল ফিতরের ২২৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮০টি জামাত হয়।
ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা দেশ : মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদ আনন্দে মেতেছিল পুরো দেশ। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আনন্দ। এরপর পরস্পরে কোলাকুলি এবং আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নিñিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার জামাতে আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বড় ঈদগাহ, বড় জামাত। লাখো মুসল্লির সঙ্গে জামাত আদায় করলে দোয়া কবুল হয়Ñ এমন আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক মুসল্লি।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহ-আল্লাহ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় চট্টগ্রাম ঈদগাহ ময়দান। এ সময় মানুষ নিজের অতীত কর্ম মনে করে ক্ষমা চেয়ে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দেশের মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয় এ সময়। দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের সুখ-শান্তি এবং মানুষের জান-মাল হেফাজতের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন ইমাম।
এরপর দ্বিতীয় আরেকটি জামায়াত এই মসজিদ ময়দানে। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া ছুন্নীয়া আলেয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হয় সকাল ৮টায় হজরত শাহ্ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। জামাতে ইমামতি করেন জামিয়া ইসলামীয়া শাহ্ মখদুম (রহ.) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী। সহকারী ইমাম ছিলেন হেতমখাঁ বড় মসজিদের ইমাম মুফতি মালানা ইয়াকুব আলী। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, রাজনৈতিক নেতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেশবাসীর অব্যাহত সুখÑশান্তি ও কল্যাণ কামনা কওে দোয়া করা হয়। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মুহাম্মদপুর টিকাপাড়া ঈদগাহ ময়দানে একই সময়ে ঈদের দ্বিতীয় প্রধান জামাত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ঈদ মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল ফিতরের নামাজ হয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসল্লিরা দলে দলে ঈদগাহ ময়দানে উপস্থিত হতে থাকেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নামাজ শেষে মাদক ও জঙ্গিবাদ প্রতিহত করে দেশের শান্তি ও উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন বন্দর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা কামাল উদ্দিন। প্রধান ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক ও সুশীলসহ সর্বস্তরের মানুষ।
উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ সর্বস্তরের মুসল্লি।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশালে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত নগরীর হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাতের ইমামতিত্ব করেন মাওলানা সিহাবউদ্দিন বেগ। এ সময় সিটি মেয়র এবং বিভাগীয়, জেলা ও মেট্রো পুলিশ এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ নামাজ আদায় করেন। প্রধান জামাত থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লাসহ দেশের প্রতি জেলা-উপজেলায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের সমৃদ্ধি ও জাতির মঙ্গল কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন মুসল্লিরা।
"