পাঠান সোহাগ
আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ
আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ঈদ। আর তা না দেখা গেলে পরের দিন হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
দীর্ঘ এক মাস সংযম ও আত্মশুদ্ধির সাধনার পর খুশির বার্তা নিয়ে আবারও এলো ঈদ। আনন্দ-উৎসবের ঢেউ রাজধানী থেকে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম-গ্রামান্তরে। এখন শুধু অপেক্ষা পশ্চিম আকাশে উঁকি দেওয়া এক ফালি বাঁকা চাঁদের জন্য। এই চাঁদই ঘোষণা করবে ঈদের দিন-ক্ষণ।
হিজরি সালের শাওয়ালের কাক্সিক্ষত এক ফালি চাঁদ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সবাই, বিশেষ করে শিশুরা। শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই রাত পোহালেই খুশির ঈদ। মৈত্রী, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির সেতুবন্ধন রচনার ঈদ উৎসব।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সন্ধ্যার আগে গোধূলিলগ্নে আকাশে সবার চোখ খুঁজবে শাওয়ালের চাঁদ। দেশের কোথাও সেই চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার ঈদ। সরকারিভাবে সে খবর দেওয়া হবে বেতার ও টেলিভিশনে। পাড়ার মসজিদের মাইকে ভেসে আসবে ‘ঈদ মোবারক’ ‘ঈদ মোবারক’ ধ্বনি। জানিয়ে দেওয়া হবে ঈদ জামাতের সময়সূচি। প্রাণে প্রাণে বেজে উঠবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সুর-‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।
ঈদ উদ্যাপনের আনন্দে মাতোয়ারা মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। মূলত চাঁদরাত থেকেই শুরু হয় ঈদের উৎসব।
ধনী ও দরিদ্র সবাই ব্যস্ত ঈদের প্রস্তুতিতে। নাড়ির টানে নিজ কর্মস্থল ছেড়ে রাজধানীসহ নগর ও শহর ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ ছুটছেন গ্রামে। শহরের মানুষ ঈদ করতে ছুটছেন শেকড়ের কাছে। আপনজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগাভাগি করে নিতে চান উৎসবের আনন্দ। শেকড়ের টানে তারা গত কয়েক দিন ধরে ঘরমুখো হওয়ায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বাড়তি বিড়ম্বনা। তবু পথের ক্লান্তি ভুলে বাড়ি ফিরছেন সবাই।
ঈদ উদযাপনকে ঘিরে ঘরে ঘরে চলছে নানা আয়োজন। ঈদ আসার একেবারে শেষ মুহূর্তে মানুষ তাদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। পছন্দের কাপড়চোপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন বড় বড় বিপণিবিতানে। ঈদের আসল আয়োজন হলো ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করা। নতুন পোশাক পরে, সুগন্ধী লাগিয়ে বাবার হাত ধরে ছোট্ট শিশুটিও ছুটবে ঈদগাহে। এ জন্য দেশের প্রতিটি ঈদগাহ এর মধ্যেই প্রস্তুত। জাতীয় ঈদগাহও প্রস্তুত নগরবাসীর জন্য। নামাজের পর কোলাকুলি চিরচেনা এ দৃশ্য।
বাড়ি বাড়ি চলছে ভালো ভালো খাবার প্রস্তুত করার আয়োজন। শিরনি, পোলাও পায়েস তৈরি হবে ঘরে ঘরে। গরিব-ধনী সবাই সাধ্যমতো ভালো খাবার রান্না করে স্বজনদের সঙ্গে মিলে আহার করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও হাসপাতাল, এতিমখানা, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র-সবখানেই থাকবে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। জেলখানা ও কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোতেও থাকবে উন্নত খাবার।
রাজধানীর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছে। চাঁদরাতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতেও করা হবে আলোকসজ্জা। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদনকেন্দ্র খোলা থাকবে ঈদে।
এই আনন্দের দিনে শুভেচ্ছা জানাবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ সব শীর্ষ রাজনীতিক আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন।
"