প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ জুন, ২০১৮

ফুঁসে উঠছে মনু ধলাই আগাম বন্যায় দুর্ভোগ

মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগে এই বন্যায় বাড়ছে দুর্ভোগ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। এ ছাড়া হাটহাজারীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

মৌলভীবাজার : দুই দিনের টানা বৃষ্টি এবং উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে দ্রুত বাড়ছে মৌলভীবাজারের মনু এবং ধলাই নদীর পানি। নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে আউশ ফসল, সবজি ক্ষেতসহ পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম, পানিবন্দি হাজারো মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি এলাকা। জানা যায়, ধলাই নদীর কমলগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, সানন্দপুর, কেওয়ালীঘাট, ঘোড়ামারা এবং বাদেওবাহাটা নামক পাঁচটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে তিনটি ইউনিয়ন। আকস্মিক বন্যায় ঈদের দুদিন আগে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, মুন্সীগঞ্জ ও রহিমপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ। পানিতে ডুবে গেছে আউশ, সবজি খেতসহ ঘরবাড়ি। এদিকে জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ও টিলাগাও ইউনিয়নে মনু নদীর ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে টিলাগাও, বাগাজুরা, তেলগাঁও চাতলাপুরসহ পাঁচটি গ্রাম।

এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ছয়টি স্থানে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে তিনটি, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রামে পৃথক আরো তিনটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী জানান, মঙ্গলবার শবেকদরের রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমতলা বিজিবি

ক্যাম্প সংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা মিলে শতাধিক বস্তা বালু দিয়ে এ স্থান রক্ষা করেন। একই সময় চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে ঢলের পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

ঢলের পানিতে শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের বটতলা থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক প্রায় তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত হলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ছয়টি স্থানের ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে হবিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। আর এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার দেড়টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে খোয়াই নদীর পানি বাড়তে শুরু করে; যা বুধবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। তিনি আরো জানান, জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অতিরিক্ত বালির বস্তা মজুদ রেখেছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গতকাল বুধবারও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সঙ্গে মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট- খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এনায়েতপুর, মির্জাপুরের কালিদাশ চৌধুরীহাট সংলগ্ন এলাকা, চারিয়া ইজতেমার মাঠ এলাকা, মুন্সির মসজিদ সংলগ্ন এলাকার সড়ক গতকালও পানির নিচে ছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটহাজারী-রাউজান মহাসড়কের সুবেদার পুকুর পাড় ও ইছাপুর এলাকা ও পানির নিচে তলিয়ে যায়। লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি। ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। গাড়ি চলাচলের বিঘœ ঘটেছে। বন্যাকবলিত মহাসড়ক পার হতে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের পূর্বমুহূর্তে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের ঈদ আনন্দে ভাটা পড়েছে। রান্না করতে না পড়ায় গতকাল অসংখ্য পরিবারকে অভুক্ত থাকতে হয়েছে। গাবাদী পশু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে চাষিরা। নলকূপ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় নিরাপদ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শৌচাগারগুলো পানিতে ডুবে গেছে।

গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ এবং ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্র্মকর্তা জাকের হোসেন বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

হাটহাজারী বৌদ্ধকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়–য়া জানান, উপজেলা আওতাধীন ১৩টি বৌদ্ধ মন্দিরের মধ্যে ৯টি বৌদ্ধ মন্দিরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নাঙ্গলমোড়া এলাকার তরুণ সমাজকর্মী মামুন চৌধুরী জানান, তিনি গতকাল বন্যা দুর্গত ছিপাতলী, গুমানমর্দ্দন ও নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের ৫০০ দুস্থ পরিবারের লোকজনকে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।

ফেনী : অতিবৃষ্টিতে পানি বেড়ে ফেনীর মুহুরি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে ফুলগাজী ইউনিয়নের ছয়টি ও পরশুরাম উপজেলার সাতটি গ্রামে এই প্লাবন দেখা দেয় বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান উদ্দিন মুরাদ বলেন, চিথলিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকায় দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে দুর্গাপুর, রতনপুর, শালধর, রামপুর, মনিপুর, নিলক্ষী, কাউতলী গ্রামে পানি ঢোকে।

আর ফুলগাজী ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ও বরইয়া এলাকায় বাঁধের ছয়টি অংশ ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, তাদের ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, ঘনিয়া মোড়া, বণিকপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলম বলেন, মুহুরি নদীর পানি গতকাল বুধবার সকালে বিপদসীমার ৩০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist