প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ জুন, ২০১৮

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন

অংশীদারিত্ব উন্নয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য জি-৭ দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনা। স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় গতকাল রোববার) জি-৭-এর আউটরিচ বৈঠকে বিশ্ব মহাসাগর বিষয়াবলি শীর্ষক এক ইন্টারভেনশনে তিনি বলেন, ‘সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শেখ হাসিনা বলেন, নীলজল আমাদের জনগণের কাছে একটি ‘ঐতিহ্য’। সময়ের দাবি অনুযায়ী, আমরা আমাদের উপসাগরকে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি বর্জ্য নিক্ষেপ এবং সাগরের জল অমøীয় হয়ে যাওয়াসহ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৭৫টি উপকূলীয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এবং নদীগুলোতে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২ কোটি লোকের বাস্তুভিটা স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জীবিকার সুযোগ সীমিত এবং মহাসাগরীয় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা খুবই সীমিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সর্বত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সামুদ্রিকনীতি গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী জি-৭ভুক্ত সকল দেশকে সমুদ্রভিত্তিক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মান এবং সুবিধার অংশীদারিত্বের নীতির ভিত্তিতে এবং তাদের উদ্ভাবন ও সক্ষমতাকে সমুদ্র সম্পদের টেকসই উন্নয়নের সুরক্ষা প্রদান, সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। অভিযোজিত প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং মূল প্রযুক্তি হস্তান্তরকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তির দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্লাস্টিকের পরিবর্তে শিল্পে পাট জাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব এক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে পচনশীল জৈবপ্রযুক্তিকে বিকল্প হিসেবে দেখতে পারে।

জলবায়ু-বিষয়ক ইন্টারভেনশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনে সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু অর্থ সংস্থানের উন্নয়নে যুক্ত করা এবং সহায়তা বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং স্থানান্তর প্রভৃতি খাতে সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দরিদ্র ও সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সমর্থনের জন্য কানাডীয় সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য কানাডা আগামী ৫ বছরে ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। আর গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য দেবে (জিসিএফ) ৩০০ মিলিয়ন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উভয় ধরনের সহযোগিতারই আহ্বান জানান।

সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জি টোয়েন্টি জোটের বর্তমান সভাপতি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির চেয়ার হাইতির প্রেসিডেন্ট, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, মার্শাল আইল্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী, আফ্রিকান ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ার রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট, সেসেলসের প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সেক্রেটারি জেনারেল, জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানায় কানাডা সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে ২০১৬ সালে জাপানে এবং ২০০১ সালে ইতালিতে জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেন। কানাডা ছাড়া জি সেভেনের বাকি ছয় সদস্য দেশ হলো ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

সফরের তৃতীয় দিন গতকাল রোববার সকালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকের পর টরন্টো যান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

টরন্টো থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকালে কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক দূত বব রে, কানাডার সাসকাচোয়ান প্রদেশের উপ প্রধানমন্ত্রী জেরেমি হ্যারিসন এবং কমার্শিয়াল কোঅপারেশন অব কানাডার প্রেসিডেন্ট মার্টিন জাবলোকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে দুপুরে টরন্টো থেকে দেশের পথে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি করে কাল মঙ্গলবার রাতে তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist