প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ জুন, ২০১৮

নিউইয়র্ক টাইমস ও আল জাজিরার প্রতিবেদন

রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশের কেউ জড়িত নয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিংয়ে দেশের কেউ জড়িত নয় বলে প্রতিবেদন ছেপেছে নিউইয়র্ক টাইমস ও আল জাজিরা। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থার ত্রুটির সুযোগ নিয়ে দেশের বাইরে থেকে হ্যাকাররা এই চুরির ঘটনা ঘটায়। এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের কথাই প্রতিবেদনগুলোতে ওঠে এসেছে। ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি এই অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে। তারাই পাচারকৃত অর্থের একটি অংশ এরই মধ্যে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ফিরেও পেয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন সত্ত্বেও এ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অনেক বিতর্ক হয়েছে।

দেশের অনেক ‘স্বনামধন্য’ ব্যক্তিরাও প্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তাদের দায়ী করার চেষ্টা করেছেন। তবে এসব প্রচারণা এখন আর ধোপে টিকছে না। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন এবং কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন দীর্ঘ তদন্ত শেষে যে দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তাতে পুরো হ্যাকিং প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী সময়ে ফিলিপিনের আরসিবিসি ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। দুইটি প্রতিবেদনের কোথাও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যে দায়ী রয়েছে এমন কোনো তথ্য আসেনি। বরং বলা হয়েছে কোনো দুর্বল টার্মিনালের মাধ্যমে গোলমেলে ওয়েবসাইট অথবা ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট দিয়ে ব্যাংকের কম্পিউটারে প্রবেশ করেছিল হ্যাকাররা এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।

এরা কারিগরি সুনিপুণভাবে সাইটটির স্ক্রিনভিউ ব্যবহার করেছিল; মাসের পর মাস নিজেদের লুকিয়ে রেখে ওরা ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বুঝে নিয়েছিল।

আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের মাধ্যমে তারা কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করেছিল এবং ক্রমেই নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র দখল করে সুইফট সার্ভারে তাদের পথ খুঁড়ে নিয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, হ্যাকাররা চাইনিজ নিউইয়ার, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তাহান্তের ছুটির সুযোগ নিয়ে লেনদেনের অর্ডার দিয়েছিল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা প্রিন্টারটি কারিগরিভাবেই অকেজো করে দিয়েছিল। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যতক্ষণে এই হ্যাকিংয়ের বিষয়টি টের পান ততক্ষণে হ্যাকাররা ফিলিপাইনের অপরাধী ব্যাংকের সহায়তায় প্রায় পুরো অর্থই নগদায়ন করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ‘স্টপ পেমেন্ট’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাও ফিলিপাইনের ব্যাংকটি গ্রাহ্য করেনি। ব্রিটিশ, রাশিয়ান, মার্কিন তদন্তেও একই তথ্য মিলছে। এফবিআই থেকেও অনুরূপ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এফবিআইয়ের তদন্তে সব প্রতিবেদনেই বাংলাদেশ ব্যাংককে ‘ভিকটিম’ বলা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের প্রভাবশালী কয়েকজন অপরিণামদর্শী ব্যক্তির অবান্তর কথাবার্তার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তাদের সামাজিক ও মানসিক বিপর্যয়ই শুধু ঘটানো হয়নি, ফিলিপাইনের অপরাধী ব্যাংকটিও এসব কথা এখন তাদের পক্ষে ব্যবহার করছে। সেজন্য ও দেশ থেকে বাকি টাকা ফেরত আনা বেশ কষ্টকর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ এসব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হ্যাকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষকরা মত দিচ্ছেন।

একই সঙ্গে কাল বিলম্ব না করে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জোর তাগিদ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সাম্প্রতিক এসব আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলোই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ ছিল এই ঘটনার শিকার।

অথচ বেশকিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এই বিষয়টি নিয়ে অবান্তর মন্তব্য করে বাংলাদেশের অবস্থানকে দুর্বল করে ফেলেছেন। এই প্রতিবেদনগুলো পড়ে তাদের এখন অনুতপ্ত হওয়া উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist