এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী
রাসিকের আয়তন বাড়ছে আড়াইগুণ
৯৬ থেকে বেড়ে আয়তন হচ্ছে ২৩৫ বর্গকিলোমিটার * লক্ষ্য নাগরিক সেবা বাড়ানো
নাগরিক সেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আয়তন বাড়ছে আড়াইগুণ। রাসিকের ভিশন ২০৫০ অর্জনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই করপোরেশনের নতুন আয়তন হবে ২৩৫ বর্গকিলোমিটার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর দিকের সীমানায় অগ্রসর হবে সিটি করপোরেশন। আর দক্ষিণে নদী থাকায় বৃত্তাকারে বাড়ানো হচ্ছে রাসিকের আয়তন। আসন্ন অর্থবছরেই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিনের সংবাদকে গতকাল রোববার বিকালে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
রাসিক মেয়র বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পরই অগোছালো শহরকে একটি বৃত্তের মধ্যে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। যে বৃত্তের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে গেলে করপোরেশনের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর দিকে পবা উজেলার আওতাধীন কাঁটাখালি পৌরসভা, পশ্চিমে হরিপুরের কিছু অংশ ও উত্তরে নওহাটার ব্রিজ পড়ছে।
তিনি বলেন, রাজশাহীকে পর্যটন নগরীরূপে গড়ে তুলতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত, লেক নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসেবা, বায়ুদূষণ রোধে পৃথিবীর সেরা নগরী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে রাসিক। এ ছাড়াও ক্রীড়া আয়োজন, কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনাসহ নানাবিধ কর্মকান্ড রাজশাহী সিটি করপোরেশন করে আসছে। নগর অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ বহুমুখীকরণের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে আধুনিক নগরী গড়ে তোলার জন্য আসন্ন বাজেটে বিভিন্ন খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সুুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময়োপযোগী ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর আগামী প্রজন্মকে একটি শিক্ষিত, সমৃদ্ধ এবং ব্যবসাবান্ধব প্রযুক্তি নির্ভর পর্যটন মহানগরীতে উন্নীত করাই আমাদের লক্ষ্য।
বুলবুল বলেন, ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি, হেলদি সিটি, এডুকেশন সিটি সর্বোপরি স্মার্ট সিটি গড়ার লক্ষ্যে ‘পরিকল্পনা ২০৫০’ মোতাবেক বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান পরিষদ। নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহানগরীকে নান্দনিক সৌন্দর্য বিকশিতকরণ, পরিচ্ছন্নসেবার মান উন্নয়ন, সড়ক নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ, পদ্মা পাড়ে বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ, হোল্ডিং ট্যাক্স সরলীকরণ পুননির্ধারণসহ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বর্তমান পরিষদ।
বুলবুল আরো বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি একটি প্রস্তাবিত বাজেট ও একটি সম্পূরক বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি কাজ করতে পারেননি। কারাভোগসহ দায়িত্বহীন ছিলেন ২২ মাস। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়ে সে সময় কারাগারে থাকায় নগরীর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গত চার বছরে প্রকল্পভিত্তিক এ করপোরেশনের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু সেসব টাকার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। বর্তমান সরকারের মনোনিত অনির্বাচিত ব্যক্তিকে চেয়ারে বসিয়ে নগর ভবনকে আর্থিকভাবে প্রতিবন্ধি করে দেওয়া হয়েছে। যেটি শুধু নগরবাসীই নয়, সারা দেশবাসী ও বিশ্ব অবগত।
স্বল্প সময় দায়িত্ব পালন করলেও নির্বাচনকালীন ইশতেহারের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি দাবি করে মেয়র বুলবুল বলেন, আগামী অর্থবছরেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের মানচিত্রে আবারও গোছানো সবুজ নগরায়ন হিসাবে রাসিকের নাম লেখা থাকবে। আর এ উপহার উৎসর্গ করা হবে শুধু মহানগরবাসীকে। কাক্সিক্ষত সেবা দানে ও দুর্নীতি মুক্ত প্রতিষ্ঠান রূপে গড়ে তুলতে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বুলবুল বলেন, বাকি সময়ের মধ্যে নগরবাসীর দাবি ও সমস্যসমূহ সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এই সময়ের মধ্যে নিজের সবটুকু দিয়েই নগরবাসীর জন্য কাজ করছি। আসন্ন নির্বাচনে এটি বিচারের দায়িত্ব নগরবাসীর বলেও উল্লেখ করেন মেয়র।
উল্লেখ্য, পুরাতন প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করেই ২০১৮-১৯ সালের অর্থবছরের জন্য গত ৩১ মে রাসিকের বর্তমান পরিষদের শেষ বাজেট (প্রস্তাবিত) ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ধরা হয়েছে ৭৫২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৬৫ টাকা। গত অর্থবছরে ৫৬৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩০৭ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করলেও সংশোধন হয়ে ২৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৩০৩ টাকায় দাঁড়িয়েছিল।
"