প্রতীক ইজাজ

  ০৩ জুন, ২০১৮

সিটি নির্বাচন

লক্ষ্য যোগ্য প্রার্থী

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত

গাজীপুরে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ নির্বাচনী কৌশল নিয়ে প্রচারণাও চলছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে খুলনার আদলে দলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন। সে অনুযায়ী, জোরেশোরে চলছে প্রচারণা ও তৃণমূলে দ্বন্দ্ব নিরসনের কাজ। সেখানে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদীও দল।

এখন লক্ষ্য ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি।

২০১৩ সালের নির্বাচনে এই তিন সিটিতেই মেয়র পদে বিএনপির কাছে হারেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। কিন্তু এবারই প্রথম সিটিগুলোতে দলীয় প্রতীকে ভোট হতে যাচ্ছে। ফলে প্রার্থীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দলের বিষয়টিও ভোটাররা বিবেচনায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাই সরকারের নানা কর্মকান্ডসহ জাতীয় ইস্যুও ফ্যাক্টর হবে নির্বাচনে। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে যেমন সতর্ক থাকতে হবে; তেমনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দলকে।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থী নিয়ে নানা আলোচনা চলছে এই তিন সিটিতে। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী- এই প্রশ্ন যেমন উঠছে; তেমনি জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে মাঠে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে সিটিগুলোতে। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক স্থানীয় বেশকিছু নেতা স্থানীয়ভাবে ও কেন্দ্রে জোর লবিং করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই অবশ্য দলের নীতি নির্ধারকরা প্রার্থী নিয়ে মাঠের এমন তথ্য আমলে নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সিলেট ও রাজশাহীর প্রার্থী অনেক আগে থেকেই ঠিক করা আছে। তারা নিজেদের মতো করে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এখানে শরিক দল বা অন্য কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বরিশালের বিষয়ে আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। আশা করি, সবদিক ভেবেচিন্তেই তিনি প্রার্থী দেবেন। এ ছাড়া দলীয় প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাদের বিষয়ে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, যেসব মন্ত্রী-এমপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন না, তারা জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।

দলীয় সূত্রমতে, তিন সিটির মধ্যে বরিশালে প্রার্থী নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। তবে রাজশাহী ও সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত। এর মধ্যে রাজশাহীতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেটে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে দলীয় মেয়রপ্রার্থী হিসেবে সবুজ সংকেত দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দুজনেই সাবেক মেয়র ছিলেন। তবে সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে তারা পরাজিত হন। এই দুইজনের মধ্যে রাজশাহীতে লিটন দলীয় সভাপতির সবুজ সংকেত পেয়ে চলতি বছরের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এ ছাড়া দলে তার বিকল্প কোনো প্রার্থীও নেই। মহাজোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাও তাকে সমর্থন দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়র পদে লিটনকে বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে সিলেটে কামরান ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিমসহ আরো কয়েকজন মেয়র পদে নির্বাচন করতে গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

তবে বরিশালে দলীয় প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ জটিলতায় পড়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্রগুলো। সূত্রমতে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থী ছিলেন শওকত হোসেন হিরণ। তিনি মারা যাওয়ার পর সেখানে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী সংকট দেখা দেয়। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই মেয়র পদে প্রার্থী হতে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়রপ্রার্থী করতে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে তিনি দলীয় সমর্থন পেয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনও মেয়রপ্রার্থী পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র পদে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নামও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ বরিশাল সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজকে মেয়রপ্রার্থী করারও দাবি জানাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, দলের মূল লক্ষ্য মাঠের ভোট। আমরা স্বচ্ছ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জয় চাই। ইতোমধ্যেই খুলনায় আওয়ামী লীগ জিতেছে। সেখানে দল ঐক্যবদ্ধ ছিল। প্রার্থীও জনপ্রিয় ছিল। তাছাড়া সরকারের কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। সুতরাং, এসব ফ্যাক্টরকে কাজে লাগিয়েই জয় আনবে আওয়ামী লীগ।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই তিন সিটিতেই হেরেছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। এর মধ্যে বরিশালে মেয়র পদে ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির মো. আহসান হাবিব। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৭১ ভোট। সিলেটে বিএনপি প্রার্থী আরিফুর রহমান চৌধুরী এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। রাজশাহীতে বিএনপির মোছাদ্দেক হোসেন বুলবুল এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে মেয়র পদে জয়ী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৭২৬ ভোট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist