মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান
রোজার রাত তাহাজ্জুদ নামাজের শ্রেষ্ঠ সময়
আজ রোববার। পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশম ও শেষ দিন। এ মাসের সিয়ামে অশেষ রহমত ও বরকত যেমন রয়েছে তেমনি এই মাসে সিয়াম পালনকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কারেরও সুসংবাদ রয়েছে। এ মাসে একটি নেক আমল অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি আমল করা উচিত আমাদের। এ ছাড়া রোজার রাত হলো তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য সর্বোত্তম রাত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে আহ্বান করতে থাকে যেÑ ‘হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী, তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক! তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’ (তিরমিজি, হাদিস নং-৬৮২)।
সুতরাং, এ থেকে বোঝা যায় এ মাসে নেক আমল তথা ইবাদত বন্দেগি করে রোজাদারের অশেষ কল্যাণ লাভের সুযোগ রয়েছে। আর ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো নামাজ। অতএব আমাদের রমজানের এ কল্যাণ লাভ করতে হলে ফরজ নামাজের সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুর নামাজ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৮১২)।
তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ। এর অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। আর শরিয়তের পরিভাষায় রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তাকেই তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। তাহাজ্জুদ নামাজসহ সব নফল নামাজ এক সালামে দুই রাকাত বা চার রাকাত করে পড়া যায়। তবে দুই রাকাত করে আদায় করাই উত্তম। রমজান ও অন্যান্য সময় রাসূল (সা.) কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পড়েছেন, কখনো আট রাকাত পড়েছেন আবার কখনো ১২ রাকাত পড়েছেন। তাই আমাদের উচিত তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে চার রাকাত আদায় করা। তবে দুই রাকাত পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে।
পবিত্র কোরআনেও তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা রাসূলকে (সা.) উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য।’ পবিত্র রমজান মাসে রাত জেগে যারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং অন্যকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয়, তারা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অপার রহমতের মধ্যে বিচরণ করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানে বেশি বেশি ইবাদত, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অশেষ নেকি হাসিল ও আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
"