প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০১৮

আসানসোলে ডি-লিট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু আমাদের সাহস কাজী নজরুল প্রেরণা

* সব বাঙালিকে উৎসর্গ * মমতার সঙ্গে বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যেমন বাঙালির জন্য সাহসের নাম ঠিক তেমনই কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের প্রেরণার নাম। তিনি বলেন, বাঙালির সৌভাগ্য, তারা বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের মতো দুই মহান কবিকে পেয়েছে। তারা কেবলমাত্র বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেননি, আমাদের জীবন ও মূল্যবোধে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। বাঙালি এই দুই কবির কাছ থেকে সম্ভবত নিজেদের চরিত্রের কমনীয়তা ও দ্রোহের সংমিশ্রণও লাভ করেছে। তাই প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি নজরুলের নামও চলে আসে। গতকাল শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উদ্যাপনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এই বিশেষ সমাবর্তন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার’ ডিগ্রি (ডি-লিট) তুলে দেওয়া হয়। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১টায় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ডি-লিট ডিগ্রি তুলে দেন। পরে এই সম্মান তিনি বাঙালিদের প্রতি উৎসর্গ করেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাজ বেঙ্গল হোটেলে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অনেক উপাধির

ডি-লিট প্রাপ্তির পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অন্যরকম ভালো লাগা। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব আসে কিন্তু নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় যখন এই ডিগ্রির প্রস্তাবটা পাই তখন না করতে পারিনি। কারণ নজরুল আমাদের বিশেষ আবেগের জায়গা। তার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাধি পেলে আরো বেশি ভালো লাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সাধন চক্রবর্তী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আলী হোসেনের ছেলে কাজী রেজাউল করিমও ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার কাছে বর্ধমানের চুরুলিয়ায় একটি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করেন। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থী-গবেষককে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ৪৪০ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রশংসাপত্র।

এর আগে সকালে কলকাতা থেকে বিমানে দুর্গাপুরের কাজী নজরুল বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সড়কপথে দুপুরে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। এরপর শুরু হয় বিশেষ সমাবর্তন ও ডি-লিট প্রদান অনুষ্ঠান। আসানসোল থেকে কলকাতায় ফিরে নেতাজি জাদুঘর পরিদর্শন এবং স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর গতকাল রাতেই ঢাকা ফেরেন শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ১৯ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে নজরুল জন্মশতবর্ষ উৎসবে যোগ দিতে আসানসোলের চুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনার হাতে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ তুলে দেয়।

শনিবার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আসতে পেরে আমি দারুণ খুশি। আমরা শুধু বাংলাদেশের কথা ভাবি না, উপমহাদেশের কথাও ভাবি। দারিদ্র্যমুক্ত উপমহাদেশ আমরা দেখতে চাই। তাই আজ যারা এখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করছে, তাদের বলব, ‘জীবনে কর্মক্ষেত্রে মানবতাবোধকে সবার উপরে স্থান দেবে। নজরুল আমাদের শিখিয়েছেন, মানব কল্যাণেই জীবনের প্রশান্তি।’

‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিও নজরুলের কবিতা থেকেই নেওয়া জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি যেন জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই স্লোগানই পরবর্তীতে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি দুই বাংলার কবিই নন, দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে রেখেছেন। নজরুল এক বিরল প্রতিভা। কোথায় নাই তার বিচরণ?

ব্রিটিশ শাসকদের বাংলা ভাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাগ হলেও নজরুল ভাগ হননি। এ কারণেই আমরা দেখছি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ দু’জায়গায়ই নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল জন্মেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায়। কিন্তু তিনি ধারণ করেছেন গোটা বাংলাকে। তিনি তার শৈশব কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। পরে নজরুল বাংলাদেশের অনেক সাহিত্য সম্মেলন ও রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর এবং অন্যান্য স্থানে কাটিয়েছেন এবং স্থানীয় জনগণের সংস্পর্শে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসনে এবং তার চিকিৎসা ও বাংলাদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাগরিকত্ব দেন এবং তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেন। নজরুলের বিখ্যাত ‘চল্ চল্ চল্/ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটি বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। মৃত্যুর পর নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমাহিত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে নজরুলের জীবন ও কর্ম নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কবি ঢাকায় যে বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন সেই বাড়িটিতে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের মতো সৌভাগ্যবান নয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পদযাত্রা স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বিঘিœত হয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই সমস্যাগুলো অমীমাংসিত রাখা উচিত নয়। আমাদের জনগণের কল্যাণের কথা ভাবা উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist