শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২৬ মে, ২০১৮

চট্টগ্রামে জমিজমার বিরোধে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

ভূমি ও জমি-জমা নিয়ে বিরোধের ঘটনায় জড়িত কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে অবৈধভাবে ভূমিকা রাখার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের একাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মানুষের মনে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা এসব ক্ষেত্রে ঘুষের টাকা লেনদেনের অভিযোগ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ কর্মকর্তরা এ বিষয়ে বলেছেন অন্য কথা। তাদের মত, পুলিশকে আইন মেনে কাজ করতে হয়। ইচ্ছা করলেই কোনো পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা নয়-ছয় করতে পারেন না।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, গত ৭ মে রাত ১২টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানাধীন পূর্ব ফরিদারপাড়া আবদুল মজিদ খলিফার বাড়ির মো. রফিকের বাড়িতে গিয়ে মারধর ও ঘর ভাঙচুর করে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের ওই দলটিতে চান্দগাঁও থানার এসআই আবদুর রহিম, এএসআই নিতাইচন্দ্র সরকার ও সিপাহি জামাল উদ্দিনসহ আরো কিছু পুলিশ সদস্য ছিল; যারা তিনটি গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।

মো. রফিকের মেয়ে পারভিন আক্তার বলেন, সেদিন আমাদের ঘর ভাঙচুর করার সময় বাধা দিলে মারধর করে পুলিশ। নারী পুলিশ ও মামলা ছাড়া আটক করে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের ভাঙচুর ও মারধরের যে ভিডিও আমি মোবাইলে রেকর্ড করেছিলাম, তা ডিলিট করে দেয় তারা। পরদিন আমিসহ আমার পরিবারের সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমাকে আদালতে পাঠালে আদালত আমাকে জামিন দেন।

জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে খালেদা বেগম নামের এক নারীর পক্ষের লোকজন থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা গ্রহণ করে সেগুলোতে গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পারভিন আক্তারের। বিরোধপূর্ণ ওই জমির দখল ছেড়ে দিতে পুলিশ তাদের পরামর্শও দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

পারভিন আক্তার বলেন, ‘গত ৮ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এএসআই নিতাইচন্দ্র সরকার সাদা পোশাকে কিছু পুলিশ সদস্য নিয়ে আমাদের ঘরে আসে। ঘরের দরজায় এসে আমাদের ঘর থেকে বের হতে বলে। তখন নারী পুলিশ না আনলে কোনো পুরুষ পুলিশকে ঘরে ঢুকতে দেব না বলি। এবং ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনাটি জানাই।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ৯ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই খালেদা বেগমের পক্ষের লোকজন এসে আমাদের ঘর ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তাদের মারধরে আমার ডান হাত ভেঙে যায়, আমার মা মমতাজ বেগম ও আমার ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু বেগম গুরুতর আহত হন। মারধরের ঘটনাস্থলের অদূরে চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশারের নির্দেশে এসআই আবদুর রহিম, এএসআই নিতাইচন্দ্র সরকার ও সিপাহি জামাল উদ্দিনসহ আরো কিছু পুলিশ সদস্য দুটি গাড়িতে অপেক্ষমাণ থাকলেও আমাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।’

পারভিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ৯ মে সকালে হামলার সময় অদূরে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে অনুরোধ করলে এএসআই নিতাইচন্দ্র সরকার বলেন, ‘কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই, জায়গার দখল ছেড়ে দাও। আর কোনো মামলা নেব না, তোমাদের গ্রেফতার করব না, আমাদের ডিসি (উপকমিশনার) স্যার ও ওসি স্যার আদেশ দিয়েছেন যে কোনো উপায়ে তোমাদের উচ্ছেদ করতে হবে।’ তখন এসআই আবদুর রহিম বলেন, ‘জায়গা দখল ছেড়ে দিলে কী হবে, তোমাদের দেখি অন্য কারো জায়গা দখল করে দেব। দেখছ না তোমাদের বিরুদ্ধে একটির পর একটি মামলা হচ্ছে। মন্ত্রী লেভেল পর্যন্ত জানে, উপর দিকে অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হবে না।’

পারভিনের অভিযোগ, সেদিনের ঘটনার পর আমরা খালেদা বেগমদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে চান্দগাঁও থানার ওসি মামলা গ্রহণ করেননি। বরং এ পর্যন্ত কোনো ঘটনা না হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিরুদ্ধে পর পর তিনটি মামলা গ্রহণ করেছেন এবং গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছেন। ফোর্স পাঠিয়ে ভূমিদস্যুদের সহযোগিতা করে আমাদের মৌরশী সম্পত্তি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করেছেন ওসি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমার মনে নেই। আমার বাড়ি চট্টগ্রামে না। কেউ আমার আত্মীয়স্বজন না যে আমি এক পক্ষে থেকে জায়গা দখল করে দেব। এই অভিযোগটি সঠিক না। তার পরও ভুক্তভোগীদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেব।’

এদিকে ২২ এপ্রিল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তা-ব চালিয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানার জামালখান ওয়ার্ডের রহমতগঞ্জ এলাকায় ১০ পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে বাড়ি দখলের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ইমাম হোসেন বলেন, সেদিন একে-৪৭ রাইফেল, চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল, হকিস্টিক, রামদা, কিরিচ, লোহার রডসহ ধারাল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বসবাসকারীদের ওপর হামলা চালায় ২০০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। বিকালে তা-ব শুরু হয় এবং মধ্যরাতে বুলডোজার দিয়ে এসব বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তবে ওই ঘটনা সম্পর্কে তৎকালীন কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জায়গার মালিক তার ক্রয় করা জায়গা বেদখল থেকে দখলে নিয়েছে। অবৈধদের উচ্ছেদ করেছে। মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, পুলিশ সদস্যরা কোনো অপরাধ করে ছাড় পায় না। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist