শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম
বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু
চট্টগ্রামের ‘কানা মঞ্জু’ পান বিক্রেতা থেকে ইয়াবার গডফাদার!
তার নাম মো. মঞ্জুরুল আলম। কিন্তু এই নামে তিনি তেমন পরিচিত নন। চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোড় এলাকায় ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি পরিচিত ‘কানা মঞ্জু’ নামে। ২০১০ সালের দিকেও রিয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম গলিতে পান-সিগারেট ও স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রি করতেন তিনি। পরের বছর থেকে শুরু করেন ফেনসিডিল বিক্রি। একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা কারবারে। মাদক চোরাকারবার করে কোটিপতি বনে যাওয়া ইয়াবার গডফাদার মঞ্জু গত সোমবার রাতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মঞ্জু চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে তালিকাভুক্ত। প্রতিদিন তিনি হাজার হাজার টাকা আয় করেন মাদক ব্যবসা থেকে। র্যাব জানিয়েছে, ২০১২ সালে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মঞ্জু। আবার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পুরনো ব্যবসায় ফিরে যান। ২০১৪ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত সোমবার শেষ রাতে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ফেনীর নিয়াজপুর এলাকায় র্যাবের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নিহত হন মঞ্জু।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দক্ষিণ রূপকানিয়া এলাকায় জন্ম কানা মঞ্জুরের।
জন্মের পর মা-বাবা ছেলের নাম রাখেন মো. মঞ্জুরুল আলম। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মঞ্জুর একটি চোখ নেই। এ কারণে মাদক চোরাচালান চক্রের লোকজন তাকে ডাকতে শুরু করে কানা মঞ্জু। তার বাবা হাজী আবদুল করিম মারা গেছেন, মায়ের নাম হাজী আনোয়ারা বেগম। নগরের ডবলমুরিং থানাধীন চারিয়াপাড়া এলাকায় কারিফ ভবনে থাকতেন তিনি। আমির নামে মঞ্জুরের এক ভাই আছে, যিনি চট্টগ্রামে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
২০০৬ সালের দিকে ফেনীতে একটি ডাকাতি মামলায় মঞ্জুকে আসামি করা হয় বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম গলিতে ছোট পরিসরে ‘জাহেদ ব্রাদার্স’ নামের একটি দোকান চালান তিনি। দোকানটিতে পান-সিগারেট ও স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রি করা হতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, দোকানদারির পাশাপাশি ফেনসিডিল বিক্রিতে নামেন মঞ্জু। কুমিল্লা সীমান্ত থেকে এসব ফেনসিডিল নিয়ে আসা হতো। একপর্যায়ে দেশে ইয়াবার প্রচলন বাড়লে সেদিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। ইয়াবা ব্যবসা করে অল্প সময়ের মধ্যে কোটিপতিতে পরিণত হন মঞ্জু।
পুলিশ সূত্র জানায়, মাদক মামলায় প্রথমবারের মতো ২০১১ সালে আসামি হন মঞ্জু, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে আরো একটি মামলা হয়। ২০১৪ সালের ২২ জুলাই রিয়াজউদ্দিন বাজারে মঞ্জুর দোকানটিতে অভিযান চালিয়ে ১৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়; ওই ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন মঞ্জু; এই ঘটনায় একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মাদক আইনে মামলা হয়।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, সোমবার দিবাগত রাত ৫টার দিকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে র্যাব সদস্যরা সেটিকে থামানোর সংকেত দেয়। তখন মাদক ব্যবসায়ীরা গাড়িটি না থামিয়ে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। র্যাব গুলি চালালে একপর্যায়ে ফেনীর নিয়াজপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াবার গডফাদার ও ব্যবসায়ীদের তালিকা ধরে অভিযান চলছে। তাদের কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। এরা দেশ ও জনগণের শত্রু।
"