প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মে, ২০১৮

বিবিসির প্রতিবেদন

চিকুনগুনিয়া : এবার কতটা সতর্ক ঢাকা

গেল বছরে যেভাবে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল তা রীতিমতো আতঙ্কিত করে তুলেছিল নগরবাসীকে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই একে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘মহামারী’ হিসেবে। যদিও সরকারিভাবে একে মহামারী ঘোষণা করা হয়নি কিন্তু সে সময় মশাবাহিত এই রোগটিতে কেউ আক্রান্ত হয়নিÑ ঢাকায় এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন।

রোগতত্ত্ব ও রোগনিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দেয়া সর্বশেষ হিসাবে, গত বছর মে মাস থেকে মাত্র সাড়ে ৪ মাসে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া সংক্রান্ত চিকিৎসা নিয়েছে ১৩ হাজার ৮০০ এর বেশি মানুষ। এর বাইরে দুই সিটি করপোরেশনে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে অনেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এমন বহু মানুষ আছে যারা চিকিৎসা নেই জেনে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হননি।

এমন প্রেক্ষাপটে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার ঠেকাতে কতটা সতর্কতামূলক প্রস্তুতি রয়েছে? সম্প্রতি ঢাকার দক্ষিণ অংশের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালায় ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। যে ১৮টি বাড়িতে তারা গিয়েছিল তার মধ্যে ১১টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে। এই লার্ভা থেকেই চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গুর রোগবহনকারী মশার জন্ম হয়। গত বছর চিকুনগুনিয়া রোগটি নানা বয়সের মানুষের মাঝে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা রীতিমতো আতঙ্কজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। একই পরিবারে একাধিক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

এমনই একজন ঢাকার রামপুরার হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, আমি হাঁটতে পারছিলাম না, বসতে পারছিলাম না, নামাজও পড়তে পারছিলাম না। হাতে, আঙুলে, পায়ে, পায়ের তলা, গাঁটে গাঁটে প্রচ- ব্যথা। দাঁড়ালে বসতে পারি না, বসলে শুতে পারি না।

এমনকি প্রস্রাব-পায়খানা করতে কমোডে বা প্যানে বসতেও কষ্ট হচ্ছিল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম ভাবলাম আমি কি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেলাম?

পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী বলছিলেন, চিকুনগুনিয়ার পর সেরে উঠলেও প্রচ- ব্যথা ছিল তার বহু দিন। সুস্থ হওয়ার পর যখন রান্না করতে গেলাম তখন দেখি হাতা থেকে খুন্তি পড়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, চিকুনগুনিয়া রোগের প্রথম দিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। একই সঙ্গে প্রচ- মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। কারো কারো শরীরে র?্যাশ ওঠে।

জ্বর ভালো হলেও রোগটি অনেক দিন ধরে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে চিকুনগুনিয়া কর্মক্ষম অনেক মানুষকে দিনের পর দিন বাধ্য করেছিল গৃহবন্দি জীবন কাটাতে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ এর কবল থেকে বাদ পড়েননি।

চিকিৎসক এবং নগর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত বছরের মে, জুন ও জুলাই মাসের দিক থেকে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ তীব্র হয়ে ওঠে। খোদ নগর কর্তৃপক্ষই বলছে, গেল বছর ঢাকার কোনো এলাকা বাদ নেই যেখানে চিকুনগুনিয়া দেখা যায়নি। তাই এ বছরও বর্ষা মৌসুম এগিয়ে আসার সঙ্গে বিভিন্ন বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ঢাকা সিটি করপোরেশনও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, এডিস মশা বদ্ধ পরিষ্কার পানিতে সাধারণত ডিম পাড়ে। ফ্লটিং ওয়াটারে অর্থাৎ পুকুরে বা নদীর পানিতে হবে না। আশপাশে পরিত্যক্ত টায়ার, কনটেইনার, প্লাস্টিক, টবের পানি, এসির বা ফ্রিজের জমে থাকা পানি, বাসাবাড়িতে ফ্লাওয়ার বক্সে যদি পানি থাকে সেখানে এই মশা ডিম পাড়তে পারে।

রোগনিয়ন্ত্রণ ও রোগতত্ত্ব আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ঢাকা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা নেয়া চিকুনগুনিয়া ও চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়া রোগীর সংখ্যা গেল বছরের ১২ মে থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮১৪ জন। ওই সময় পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ থেকে ১৭টি জেলা থেকে ১৮৫ জনের তথ্য পাঠানো হয়। তবে বাস্তবতা হলো চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি।

অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনার ভাষ্য, গত বছর যেভাবে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়েছিল তাকে তারা মহামারী না বললেও অবশ্যই সেটি ছিল মারাত্মক প্রাদুর্ভাব যেখানে প্রায় ১৪ হাজার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এদিকে বিভিন্ন বাড়িতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে লার্ভা পাওয়ায় কিছুটা হলেও চিন্তিত বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, গতবারের মতো পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সেজন্য তারা এবার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমেও এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।

আর উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হাসান বলেন, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে যেহেতু চিকুনগুনিয়ার বিস্তার দেখা যায় তাই মে মাসের শুরু থেকেই মশা নিধন কাজ শুরু করেছেন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে। আইইডিসিআর বছরের প্রথমদিকে একটি সার্ভে করে কিছু কিছু এলাকা শনাক্ত করেছিল। যেমনÑ বলা হয়েছিল বনানীতে এডিসের প্রকোপটা বেশি। সব এলাকাতেই কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমরা ৩৬টি ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে কার্যক্রম চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist