প্রতীক ইজাজ

  ২০ মে, ২০১৮

দুই দলের চোখ এখন গাজীপুরে

দলীয় ঐক্যে কঠোর আওয়ামী লীগ

খুলনায় জয় পেয়ে এখন গাজীপুরের ব্যাপারেও ভীষণ উদ্দীপ্ত এবং আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। খুলনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুরের জন্য নিয়েছে নতুন কৌশল। পক্ষান্তরে মুষড়ে পড়েছে বিএনপি। খুলনার তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ভাবছে নতুন ভাবনা

খুলনায় বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর এবার আওয়ামী লীগের লক্ষ্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরপেক্ষ ভোটের মধ্য দিয়ে এখানকার হারানো মেয়র পদ পুনরুদ্ধারে তৎপর দলটি। এজন্য খুলনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গাজীপুরে নতুন করে নির্বাচনী কৌশল প্রণয়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে যে কারণে বিগত সময়ে এখানে মেয়র পদে হেরেছিল আওয়ামী লীগ, দলের মধ্যে সেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে এবার সবচেয়ে বেশি তৎপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এজন্য কেন্দ্র থেকে কঠিন বার্তাও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় নেতাদের। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এসব নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, তৃণমূলে সাংগঠনিক ঐক্য ও কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে খুলনায় দলের জয় এসেছে। সাধারণ ভোটাররা সরকারের ওপর সন্তুষ্ট। পক্ষান্তরে ভুল রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এবং প্রচারণায় দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রাধান্য পাওয়ায় বড় ব্যবধানে খুলনায় হেরেছে বিএনপি। গাজীপুরের নির্বাচনে এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে আওয়ামী লীগ।

গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার খুলনার নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, খুলনার নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর লক্ষাধিক ভোট প্রাপ্তিতে বিস্ময় ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দুঃশাসন-দুর্নীতি করেছে। রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্ব হারিয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা এবং জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এমনকি বিএনপির মেয়র ক্ষমতায় থাকতে এলাকার কোনো উন্নয়ন করেনি। এরপরও বিএনপি এত ভোট পায় কী করে? দল কি তবে বিএনপির অপকর্মের তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে?

এর পরিপ্রেক্ষিতে পর দিন থেকেই দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছেন। বিএনপির শাসনামলের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের তথ্য প্রচার করছেন। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিরও সমালোচনা করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণায় দেশ ও জনগণের উন্নয়নের কথা না বলে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মানুষ এটি ভালোভাবে নেয়নি। বিএনপির প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

খুলনার চেয়ে আরো ভালো ব্যবধানে গাজীপুরে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে আশাবাদী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের মতে, খুলনায় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায়, গাজীপুরেও দলের নেতাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ থাকবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার। খুলনার চেয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি এবং খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। দল মনে করছে, খুলনার কৌশল ও ফল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কৌশল প্রণয়ন সহজ করে দিয়েছে।

এই নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকা- পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আজমত উল্লাহ খানকে। তিনি ‘প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট’। প্রধান সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক। নির্বাচনী দলের অন্য সদস্যরা হলেন দীপু মনি, আহমদ হোসেন, আখতারুজ্জামান, আফজাল হোসেন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শামসুন নাহার চাঁপা ও অসীম কুমার উকিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, খুলনার চেয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। দেশের মানুষ এখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিশ্বাসী। তারা উন্নয়ন চায়। এজন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। যে দলের প্রধান দুর্নীতির মামলায় দ-িত, সে দলের প্রার্থীকে মানুষ কেন ভোট দেবে। সেজন্যই খুলনায় বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ। আওয়ামী লীগে আস্থা এনেছে। গাজীপুরেও আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে মানুষ।

খুলনার সঙ্গে গাজীপুরেও ১৫ মে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। দলীয় প্রার্থী হন আজমত উল্লাহ খান। সেবার বিএনপির কাছে হারে আওয়ামী লীগ। এবারও আজমত উল্লাহ খান প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় জাহাঙ্গীর আলমকে। এ নিয়ে শুরু থেকেই স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। কোন্দল নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরই মধ্যে ৬ মে সীমানা জটিলতায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত করেন আদালত। পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন করার পক্ষে আদেশ দেন আদালত। আগামী ২৬ জুন নির্বাচনের দিন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন।

নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্র থেকে তৎপরতা শুরু করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে খুলনায় জয় আসায় গাজীপুরে জয়ের ব্যাপারে এখন অনেকটাই আশাবাদী দলের নেতারা। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জয় নিশ্চিতে স্থানীয় নেতাদের বিবদমান সম্পর্ক ভাঙতে এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে গাজীপুরে নির্দেশনা গেছে। দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ডের কঠোর বার্তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সতর্ক করা হয়েছে স্থানীয় এক মন্ত্রী, এক সংসদ সদস্য ও গাজীপুরের কয়েকজন প্রভাবশালী মহানগর ও জেলা নেতাকে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গেলে এদের কেউ-ই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না বলে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এবার এ নেতাদের কর্মকা- মনিটরিং করা হবে বলেও জানান এ নেতা।

দলীয় সূত্র মতে, খুলনার চেয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি এবং খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। গাজীপুর সিটির নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়লাভের জন্য জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পৃথক টিম গঠন করেছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা থানা ও এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে সরকারের ও আওয়ামী লীগের বিগত মেয়রের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রগুলো আরো বলছে, খুলনা ও গাজীপুরে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের নিজ দলের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সার্বিক তদারকির কারণে খুলনায় ঐক্যবদ্ধ ছিল আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় গাজীপুরেও পুরো আওয়ামী লীগকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নিয়ে এসে খুলনার মতো জয় চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্য ওয়ার্ডভিত্তিক ৪২৫টি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। দলের মধ্যে এখনো যেটুকু অনৈক্য আছে তা অচিরেই দূর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

এ ব্যাপারে আজমত উল্লাহ খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গাজীপুর বড় শিল্প এলাকা। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রকৃত আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। কিন্তু দলে কিছু লোকজন ঢুকেছে। যারা কোন্দল বাঁধিয়ে নানা সুবিধা নেয়। আমরা গাজীপুরের ব্যাপারে আশাবাদী। দেখা যাক কী হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। আর বড় দলে বিরোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রার্থীকে জয়ী করতে এরই মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মাঠে নেমেছেন। নৌকার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist