হাসান ইমন

  ১৮ মে, ২০১৮

রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার

ব্যবসায়ীদের আশ্বাসের পরও দাম বেড়েছে

প্রতিবছরই রোজার আগে ব্যবসায়ীরা সরকারকে আশ্বাস দেন, পণ্যের দাম না বাড়ানোর। অতি মুনাফা না করার। কিন্তু এসব আশ্বাস কাজে পরিণত হয় না। কারসাজি করে বাজার রাখেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই। এবারও কথা দিয়েছিলেন; কিন্তু রাখতে পারেননি। ফলে ছোলা, চিনি, মুড়ি ও বেগুনের দাম রোজার আগেই বেড়ে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি একটা বাড়েনি। এরমধ্যে কয়েকটি পণ্যের দাম গত বছরের চেয়ে কম। যদিও বাজারে চাহিদার তুলনায় রোজার প্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। তারপরও সরকারের মনিটরিং টিম কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পণ্যের দাম অনেকটাই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। যদিও গত তিন দিনের ব্যবধানে আদা, আলু ও বেগুনের দাম বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। কয়েকটি পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে এবার যেন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে নিয়মিত বাজার মনিটরিং, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি।

এই বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তিন দিন আগে বলেছেন, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য মজুদ অনেক বেশি রয়েছে। তাই রমজানে পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার পরও যদি কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কঠোরভাবে বাজার মনিটর করবে।

কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণা গতানুগতিক বলে মনে করছে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একসঙ্গে পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। রোজায় কয়েকটি পণ্যের বেশি প্রয়োজন হয়। এসব পণ্যের উৎপাদন প্রচুর। আমদানিও পর্যাপ্ত। বাজারে সরবরাহেও তেমন কোনো সংকট নেই। ফলে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। এরপরও ব্যবসায়ীরা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রমজানের পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে আগাম নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২ দশমিক ৫ লাখ টন, চিনি তিন লাখ টন, ছোলা ৮০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ চার লাখ টন। এর বিপরীতে বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে ২২ দশমিক ৫৯ লাখ টন, চিনি ৪ দশমিক ৩৫ লাখ টন, ছোলা ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, খেজুর ৬৪ হাজার টন ও পেঁয়াজ ১৭ দশমিক ৯১ লাখ টন। গত মার্চ পর্যন্ত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হিসাব ধরে মজুতের এ হিসাব দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে দেশে চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নিত্যপণ্যের মজুদ রয়েছে।

এদিকে, গত রমজানের তুলনায় এবার রোজার প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তেমন একটা বাড়েনি। গত বছরের রোজার দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৬ মে বাজারে ছোলা বিক্রি হয়েছিল কেজি প্রতি ৮০-৯৫ টাকা। যা এ বছরই রোজার আগের দিন ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৯০ টাকা। গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০-৬২ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭২-৭৪ টাকায়। রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে দেশি রসুন ১৪০ টাকা ও বিদেশি রসুন ২৮০ টাকায়।

খেসারির ডাল গত বছরের দামই ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরু ও খাসির মাংস এবং মুরগির কেজি গত বছরের দামের মতোই বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। গত বছর ২৮-৩২ টাকা বিক্রি হলেও গতকালের বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা কেজি।

অন্যদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও বেড়েছে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম। এরমধ্যে বাজারে এখন ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৫-৯০ টাকা। যা গত দুই মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। দুই মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫-২৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া গত এক মাস আগে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকার চিনি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকায়। ৫৫-৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়া মুড়ি গতকালও বিক্রি হয়েছে ৭০-১২০টাকা কেজি দরে। রোজা এলে বেগুনের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। গত এক মাসে ৩০ টাকার বেগুন গতকাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০টাকা। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। যদিও মৌসুমে কৃষকরা পাঁচ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছেন। শুধু আলু ও বেগুন নয়, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে কাঁচামারিচ ৬০ এবং শসা ৬০-৮০ টাকা হয়েছে। করলা, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়সসহ অন্য সবজির দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

মহাখালী কাঁচাবাজারের মুদি ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান হৃদয় বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। পাইকারি থেকে শুরু করে যেকোনো স্তরে দাম বাড়লে তার ভার পরে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে দাম বাড়ায়।

বাজারে আসা ক্রেতা রহিম শিকদার বলেন, সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকলে বাজারের দৈন্যদশা চলবে। যে যার মতো লুট করে নিচ্ছে। আমাদের তাই-ই মেনে নিতে হচ্ছে।

এই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া টিসিবিতে প্রয়োজনমতো পণ্য মজুদ রাখা হচ্ছে। কোনো রকম সংকটের আশঙ্কা নেই।’ বাজার মনিটরিং টিম থাকবে। সুতরাং, এবার কোনো ধরনের কারসাজির সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, যেহেতু রোজায় চাহিদা বাড়ে, সে জন্য দাম একটু বাড়তে পারে। তবে এবার পর্যাপ্ত আমদানি করা হয়েছে। যদি কোনো কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় তাহলে দাম বাড়বে না।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার হাতিরপুল বাজার পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, রমজানে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামীকাল থেকে ডিএসসিসির ৫টি অঞ্চলে ৫টি টিম মাঠে নামবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist