প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০১ মে, ২০১৮

বজ্রপাতে ফের ১৫ জনের প্রাণহানি

বজ্রপাতে হতাহতদের বেশিরভাগই কৃষক

বজ্রপাতে গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগারি, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, ইসলামগঞ্জ, পুঠিয়া, ও শ্রীমঙ্গলে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ছয়জন। তাদের অধিকাংশই কৃষক। এর আগে গত রোববারও দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে ও বজ্রপাতে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্র, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও অপর দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেনÑ তারাব পৌরসভার তেঁতলাব এলাকার জলিল খানের ছেলে ও তেঁতলাব আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফরহাদ হোসেন (১৩), ভোলাব ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক ও বন্দের বাড়ি এলাকার নুরুল হকের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৩), একই এলাকার কামাল মোল্লার ছেলে হাসেম মোল্লা (১৫) ও সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের মুসারচর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ওবায়দুল হক (৩০)। সোমবার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার তেঁতলাব, ভোলাব বন্দের বাড়ি ও সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রফিকুল ইসলাম, হাসেম মোল্লা ও ওবায়দুল মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন। এ সময় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই রফিকুল ও ওবায়দুল মারা যান। আর হাসেম মোল্লা গুরুতর আহত হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে, স্কুলছাত্র ফরহাদ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ির পাশের জলাশয়ে মাছ ধরতে যায়। এ সময় বজ্রপাতে সে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে তুমুল বৃষ্টিপাতের সময় উপজেলার আইনাপুকুর গ্রামে তিনি ধান কাটছিলেন। ওই কৃষকের নাম বাবলু মিয়া (৪৫)। তিনি ওই গ্রামের নাজমুল ইসলামের ছেলে।

সুনামগঞ্জে : দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামখোলা হাওরে এক ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন দ?ক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি ইখ?তিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। নিহত ইয়াহিয়া আহমদ (৪২) সি?লে?টের কানাইঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের ইলিয়াছ আলীর ছেলে। কিছুদিন আগে ধান কাটার কাজে কানাইঘাট থেকে দ?ক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসেন তিনি।

ওসি ইখ?তিয়ার বলেন, সকালে ইয়াহিয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক স্থানীয় জামখোলা হাওরে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থ?লেই ইয়া?হিয়ার মৃত্যু হয়।

রাজবাড়ী : বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রামে মতিন শেখ নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয় বলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আলী জানান। আবুল হোসেন জানান, সকালে ক্ষেতে কাজ করছিলেন মতিন । এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মতিন ওই গ্রামের মতু শেখের ছেলে।

পাবনা : পাবনায় ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখীর সময় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আম, লিচু ও বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে আকাশ কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে আসে। শুরু হয় প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি।

পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির এস আই শহিদুল ইসলাম শহীদ জানান, ঝড়ের সময় ঈশ্বরদী উপজেলার পল্টন ঘাটে বজ্রপাত হলে একজন মারা যান। তবে তিনি নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানাতে পারেননি।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় বজ্রপাতে হাসিবুল নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন একজন। সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মহাম্মদজুম্মা গ্রামের ছাতেনতলার মাঠে এ ঘটনা ঘটে। হাসিবুল কুতুবপুর গ্রামের মাজেদুল ইসলামের ছেলে ও বদরগঞ্জ কলেজের ডিগ্রির ছাত্র। আহত নজরুল ইসলাম শৈলগাড়ি গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে।

জানা যায়, সোমবার দুপুরে হাসিবুল ও নজরুল মহাম্মদজুম্মা গ্রামের ছাতেনতলা মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে দুজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসিবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার তেলকুমার হাওরে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বজ্রপাতে শামসুল হক (৩৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শামসুল হক বানিয়াচং উপজেলার জাদুকর্ণপাড়ার মৃত গাজী রহমানের ছেলে।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাওরের পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বৃষ্টির মাঝেই কৃষক শামছুল হক ধান কাটতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ইসলামপুর : জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় চিনাডুলী ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলী গ্রামে গতকাল সোমবার সকালে বজ্রপাতের ঘটনায় বকুল মিয়া (২৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন আবদুর রাজ্জাক (৫০)। বকুল একই এলাকার আবদুস ছাত্তারের ছেলে। আর রাজ্জাক বাবর আলীর ছেলে।

জানা গেছে, যমুনা নদীর অপর পাড়ে কৃষিকাজ করার জন্য সকাল ৭টার দিকে তারা দুজনেই বাড়ি থেকে বের হন। নৌকায় নদী পার হওয়ার সময়ে বজ্রপাতের ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা খবর পেয়ে আহত রাজ্জাককে দ্রুত ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান। এছাড়া বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন সরিষাবাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামের আলেপ উদ্দিন ম-লের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৬)।

সরিষাবাড়ির মহাদান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘গ্রামের একটি জমিতে ধান কাটছিলেন হাবিবুর। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।’

পুঠিয়া (রাজশাহী) : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় সোমবার সকালে ইয়াকুব (৪০) নামের এক কৃষক বজ্রপাতে নিহত হন। গতকাল সোমবার সকালে পৌনে ৭টায় দিকে ব্যাপক ঝড় ও শিলাবৃষ্টির সময় বেগুনক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন ইয়াকুব। সেই সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে। এদিকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পানবরজ, আম, ধান, ভুুট্টা কলা ও পেঁপে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে ২ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার লেবু বাগানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ৫ জন আহত হন। আহতরা হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়ার রিপন ভূইয়া (১৮), অজয় গোয়ালা (৩০), দিপন সবর (৩০), রাখাল সবর (৩২), কিশোর গোয়ালা (২০)। আহতদের মধ্যে অজয় গোয়ালাকে মৌলভীবাজারের সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে তমিজ উদ্দিন (৩৫) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় তার সঙ্গে থাকা ৩টি গরুও ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সোমবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তমিজ উদ্দিন আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের হাজী আব্দুল মতলিবের ছেলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist