প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
মিয়ানমারের ওপর ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ছে
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখাইন যাচ্ছে জাতিসংঘ দল
মিয়ানমারের ওপর আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চলতি সপ্তাহে ইইউ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
এ ছাড়া দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যাচ্ছে। সিএনএনের খবরে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ও নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা। ইইউ আরো জানায়, এ ঘোষণার সঙ্গে মিয়ানমারের কয়েকজন জেনারেলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা রয়েছে।
কূটনীতিকরা বলছেন, ইইউর চলমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি এপ্রিলে। তার আগেই নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এর আওতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি পড়বে। রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের ঘটনায় গত অক্টোবরে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে সম্মত হয় ইইউ। জাতিসংঘের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যেই সেনা অভিযান চালানো হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। আগামী মে বা জুনে মিয়ানমারের মেজর জেনারেল মও মও সোয়েসহ সেনা কর্মকর্তাদের ভিসা নিষিদ্ধ এবং সম্পদ জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছে ইইউ।
রাখাইন পরিদর্শন : রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল। আগামী ১ মে সেখানে যাবে বলে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
গত আগস্টে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস নির্যাতনের পর এটাই জাতিসংঘের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদলের রাখাইন সফর হবে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার দাবি করেছিল ‘এখন উপযুক্ত সময় না’। এরপর চলতি মাসে তারা ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
মিয়ানমারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ৩০ এপ্রিল নেপিদো পৌঁছাবেন এবং তার পরদিনই রাখাইনে যাবেন। ঘটনার শুরু গত বছরের ২৫ আগস্ট। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি মুসলমান’ আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়ন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় দেশটি। সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপ মতে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দুই বছরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত জানুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়।
"