গাজী শাহনেওয়াজ
সিটি নির্বাচন
ভোটযুদ্ধের প্রচার শুরু আজ
* বিধি সংশোধন হয়নি; প্রচারে নামছেন না মন্ত্রী-এমপি * বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। এ ভোটযুদ্ধে জয়ী হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ প্রচারে নামছেন প্রার্থীরা। সিটি নির্বাচনের ভোটের ২১ দিন আগে থেকে প্রার্থীদের প্রচার শুরু হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ায় আজ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবেন খুলনা ও গাজীপুর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা; এর সঙ্গে সঙ্গে দামামা বেজে উঠবে নির্বাচনী প্রচারের। তবে আচরণ বিধিমালা সংশোধন না হও৬য়ায় মন্ত্রী বা এমপিরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। এদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের পক্ষে জাসদ ও বিএনপির পক্ষে জামায়াত প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার এই নির্বাচনকে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন মন্ডল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ভালো। প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে আগামীকাল (আজ) প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক পেয়েই নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনূচ আলী বলেন, আজ থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হবে। আচরণবিধি যাতে মেনে মনোনীত প্রার্থীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন সেজন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কারণ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলে কেউ ছাড় পাবে না।
এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে থাকায় দুই সিটির নির্বাচনী পালে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। অন্য দলের প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে থাকলেও নৌকা এবং ধানের শীষের মধ্যে হবে মূল লড়াই। এরই মধ্যে বিএনপির প্রার্থীদের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। শুরু হয়েছে কথার লড়াইও।
খুলনার বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলের সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা গভীর রাতে পুলিশ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করায় সবাই উদ্বিগ্ন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, রাতের ওই বৈঠকের নির্দেশনার পরই পুলিশের ভূমিকা পাল্টে গেছে। ১৫, ২৪, ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ, তাদের হয়রানি করছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, এই নির্বাচনে যদি ভোট ডাকাতি হয়Ñ এটিই হবে সরকারের গলার কাঁটা। এই নির্বাচনে যদি ভোট ডাকাতি হয়Ñ তাহলে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন হবে না।
তবে, নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে কী ধরনের উন্নয়ন করবেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে খুলনাকে জলাবদ্ধ মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ। সামান্য বৃষ্টি হলেই খুলনা মহানগরী প্রায় অর্ধেক পানির নিচে থাকে। আমি মেয়র থাকাকালীন ২২টি খাল অবমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসন করেছিলাম। আজ সেই খাল পুনরায় দখল হয়ে যাওয়া নগরী পুনরায় জলাবদ্ধ নগরীতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে নগরীর মানুষ। তিনি বলেন, নগরবাসী উন্নয়ন থেকে পাঁচটি বছর পিছিয়ে গিয়েছে।
একইভাবে গাজীপুর সিটির বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশনকে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। কারণ তারা ঘুমিয়ে আছে। আর সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা জানি না। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেনবাহিনী ছাড়া হবে না।
সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মন্ত্রী বা এমপিরা প্রচার চালাতে পারবেন না। আচরণ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে কমিশন সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে আচরণ বিধিমালা পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যেহেতু আচরণ বিধিমালা সংশোধন হয়নি তাই মন্ত্রী বা এমপিরা প্রচার চালাতে পারবেন না।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করে প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন কিনাÑ তা দেখতে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। কেউ বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রচার চালালে ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দিতে পারবেন। আর রাজনৈতিক দল বিধি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর কমিশন আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। পাশাপাশি কমিশনও প্রচার কার্যক্রম নজরদারি করবে। কমিশন কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রচারের শুরুর দিন থেকেই বুঝা যাবে আগামী দিনের পরিস্থিতি কেমন হবে।
তারা আরো জানান, প্রচারের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী সমান সুযোগ পাবেন। প্রার্থীদের কিছু বিধি-নিষেধ মেনে প্রচার চালাতে হবে। প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান দিতে পারবেন না। সার্কিট হাউস, ডাকবাংলোসহ সরকারি স্থাপনায় প্রচার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। পথসভা বা ঘরোয়া সভা ব্যতিত কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। পোস্টার ও লিফলেট নির্দিষ্ট আকারের হতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় মিছিল বা শোডাউন করা যাবে না।
"