ঝালকাঠি প্রতিনিধি

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

৬ র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে লিমন হত্যাচেষ্টা মামলা

তদন্ত করবে পিবিআই

র‌্যাব-৮-এর ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ঝালকাঠির রাজাপুরের লিমন হোসেন হত্যাচেষ্টা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বরিশালকে (পিবিআই) তদন্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সেলিম রেজা এ আদেশ দেন। ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ লিমনের মা হেনোয়রা বেগম ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন দায়ের করেছিলেন। ৫ বছরে ৪২ বার এ রিভিশনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচজন জেলা ও দায়রা জজ এবং দুজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রিভিশনের শুনানি গ্রহণ করেন। সপ্তম বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান গত ১ এপ্রিল রিভিশনের সর্বশেষ শুনানি শেষে রিভিশন মঞ্জুর করেন। মামলার নথি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আসার পর গতকাল রোববার দুপুরে লিমনের মা হেনোয়রা বেগমের জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। যদিও হেনোয়রা বেগমের আইনজীবীরা আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণ অথবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ প্রার্থনা করেছিলেন। আদালতের তদন্তের আদেশের ফলে বরিশাল র‌্যাব-৮-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) লুৎফর রহমানসহ ছয় র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে লিমন হত্যাচেষ্টা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলো।

লিমনের মায়ের আইনজীবী মো. আককাস সিকদার এবং মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বাড়ির কাছের মাঠে গরু আনতে গিয়ে কলেজছাত্র লিমন হোসেন র‌্যাব সদস্যদের কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ লিমনকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে, তার সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোরসেদ জমাদ্দার এবং তার সহযোগীসহ আটজনের নামে দুটি মামলা করেন র‌্যাবের ডিএডি লুৎফর রহমান। এর একটি অস্ত্র আইনে এবং অপরটি সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে। ২০১১ সালের ২৭ মার্চ যথাযথ চিকিৎসার অভাবে লিমনের বাম পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল র‌্যাব-৮-এর ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশের ১৬ দিন পর ২৬ এপ্রিল রাজাপুর থানায় র‌্যাবের ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয়জনের নামে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন করপোরাল মাজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, নায়েক মুক্তাদির হোসেন, সৈনিক শ্রী প্রহল্ল্াদ চন্দ্র এবং সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাস।

পুলিশ ওই মামলায় ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট র‌্যাব সদস্যদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। লিমনের মা হেনোয়রা বেগম পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট নারাজি দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারাজি আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারক মো. শাহীদুল ইসলাম। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন লিমনের মা। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচজন জেলা ও দায়রা জজ ২৬ বার রিভিশনের শুনানি গ্রহণ করেন এবং কোনো আদেশ না দিয়ে অধিকতর শুনানির জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট থেকে ১০১৮ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৬ বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৪২তম শুনানি শেষে গত ১ এপ্রিল আদালত র‌্যাবের বিরুদ্ধে করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন।

লিমনের মায়ের আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, জজ কোর্টে রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পরে আমলি আদালত পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেওয়ায় লিমন হত্যাচেষ্টায় র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলো।

মুঠোফোনে লিমন হোসেন বলেন, ‘র‌্যাব আমাকে গুলি করে শুধু পঙ্গুই করেনি, আমাকে সন্ত্রাসী বানানোর জন্য নানা রকম কারসাজি করেছে। পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে আমার মায়ের দায়ের করা মামলা আবার চালু হয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি, এক দিন র‌্যাবের ওই সদস্যদেরও আদালতে বিচার হবে।’ লিমনের মা হেনোয়রা বেগম বলেন, ‘সাত বছর পর্যন্ত আমি আমার ছেলেকে গুলি করে পঙ্গু করার বিচার দাবি করে আসছি। আদালত আমার রিভিশন গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয় আমার অভিযোগ সত্য।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist