গাজী শাহনেওয়াজ
সংস্কার হওয়া ইভিএমের ডেমো প্রদর্শন হবে আজ
সংস্কার হওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ডেমো আজ প্রদর্শন হবে নির্বাচন কমিশনে। সকাল সাড়ে ৯টায় নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ডেমো প্রদর্শিত হবে।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন সংস্কার হওয়া ইভিএমে ভোট হবে। কমিশন মনে করছে, নানা সংস্কারের পর এটাই ভোটে ব্যবহারের উপযোগী প্রযুক্তি। কারণ এক মেশিনেই ভোটারের পরিচয় শনাক্ত ও ভোটদান চলবে। আগে ভোটদান ও ভোটার শনাক্তকরণ মেশিন ছিল আলাদা; যা একত্রে করে প্রদর্শন হচ্ছে। এতে দ্রুত ভোটগ্রহণ ও সময় সাশ্রয় হবে। খবর ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সম্প্রতি এক সভায় এর কাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার জন্য ১১টি সুপারিশ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভোটার শনাক্তকরণ ও ভোটিং মেশিন দুটি সন্নিবেশিত করে একটি মেশিনে রূপান্তর করার। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই কাজটি মোডিফাই করে একটি মেশিনে রূপান্তর করেছে; যার ডেমো প্রদর্শন হবে আজ। এটাতে ঝুঁকিমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব এমন ইতিবাচক ফল এলে খুলনা ও গাজীপুর সিটির নির্বাচনে ব্যবহার করবে কমিশন। ইতোমধ্যে এ দু সিটিতে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এছাড়া ইভিএমে ব্যবহৃত ব্যাটারির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। কমিশনের মতে, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে এসব পদক্ষেপ নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১/১১ এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কিনলেও তা-ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওর্য়াডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় ১/১১ কমিশনের স্থলে বিধির নিয়মে নতুন কমিশন হিসেবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণের আগে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। আর গত ফেব্রুয়ারিতে খান মো. নুরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১ নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষে ব্যবহার করে। কিন্তু পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়নি। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন শেষ করে। পরবর্তীতে সুরক্ষিত ইভিএম তৈরিতে যত ধরনের সম্ভাব্য উপায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে মাঠে নেমে পড়ে ইভিএমের কারিগরি টিম। যার ফলশ্রুতিতে মোডিফাই ইভিএম তৈরি করে টেকনিক্যাল টিম ও সাব টেকনিক্যাল টিম পর্যালোচনা করে এটিকে ব্যবহারের উপেযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগের (ইসির অধীন) মহাপরিচালক ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, পুরনো ইভিএমগুলোর ভুলত্রুটি সংশোধন করে বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে। এটার সম্ভাব্য সব ধরনের কারিগরি ত্রুটি নিয়ে ইভিএমের কারিগরি কমিটি ও সাব-কারিগরি কমিটি পর্যালোচনা ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। এটিকে প্রদর্শন করা গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি হবে এবং তারা এটি দেখে খুশি হবেন। কারণ ব্যালট ছিনতাই ও অন্যের ভোট দেওয়া বন্ধ হবে না এতে। এনআইডির ডিজি বলেন, এই প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ভালো পদক্ষেপ। কারণ এটি হ্যাং করা যাবে না। তাই ইভিএমের প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। সবাইকে নিয়ে এটির প্রদর্শন করা হবে।
এদিকে, বাংলাদেশে ব্যবহারের আগে এই প্রযুক্তি বিশ্বের অনেক দেশে ব্যবহার হলেও কোনো ইতিবাচক সুফল দেখা যায়নি। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই প্রযুক্তির বিতর্কিত ফল নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে। এখন ইভিএম থেকে বেরিয়ে আসতে প্রবীণ রাজনৈতিক দল কংগ্রেস দেশটির নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে চাইছে। দলটি এখন ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রের (ইভিএম) বদলে আগামী দিনের সব নির্বাচন আগের মতো কাগজের ব্যালটে করার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন। ইভিএম নিয়ে সাধারণ ভোটারের মধ্যে যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, তা দূর করতেই পুরনো ব্যালট পেপারে ফিরে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে কংগ্রেস। সম্প্রতি কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বলা হয়েছে, ইভিএমের ব্যাপক অপব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য জনমতের উল্টো ফল বেরোয়। এই আশঙ্কা দূর করতেই ব্যালটে ভোট ফের চালু করা দরকার। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে ইভিএমে কারসাজি করে রায় বদলের অভিযোগ করা হচ্ছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন সবসময় দাবি করেছে, ইভিএমে কারসাজি করা সম্ভব নয়।
আমাদের এখানেও ইভিএমে কারসাজি নিয়ে বিএনপি সোচ্চার রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও কমিশন এটির পক্ষে জোরালো অবস্থানে আছেন। এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ নির্ভর ইভিএমে খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে কত সহজ প্রক্রিয়াতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে।
"