নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই সিটি নির্বাচন
সেনা মোতায়েন চায় বিএনপিইসির না
ইভিএমে সায় কমিশনের
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির এক প্রতিনিধিদল এই দাবি জানায়। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, স্থানীয় সরকারের এই দুই সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই। নির্বাচনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ইসির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ইসির পরিকল্পনার কথা জানান সচিব।
বিএনপি সেনা মোতায়েন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি জানায়। দাবির মধ্যে রয়েছে, সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলি করে নিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না; বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি করা; রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করে গ্রেফতারদের মুক্তি দেওয়া; প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া; জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ কেন্দ্র চালু করে অভিযোগ দায়েরের ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা; ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা; কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে আনসার-ভিডিপি হিসেবে ভোট কেন্দ্রে নিয়োগ না দেওয়া; কমিউনিটি পুলিশের কোনো সদস্যকে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব না দেওয়া; পরীক্ষামূলক বা অন্য কোনো অজুহাতে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার না করা।
এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার ওপর জোর দেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এর আগে সিইসি ৮ এপ্রিল সেনা মোতায়েন নিয়ে কথা বলেন। ওই দিন এক বৈঠকে অংশ নেওয়া শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমরা একেবারেই চাই না।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই ইসির।
এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনকে সামনে রেখে কমিশনের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। দলের মূল দাবি, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৭ দিন আগে যেন সেনা মোতায়েন করা হয়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে।
এই নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। ইভিএম প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৈঠকে দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে দুইটি সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। মোশাররফ জানান, আইনের কোন ধারায় কোন এখতিয়ারে ইসি এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ অতীতে এ ধরনের কমিটি গঠনের উদাহরণ নেই।
সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনাÑ এ দুইটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে।
মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকতে হবে। বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না।’
ভোট কেন্দ্রগুলোয় আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনে সতর্ক থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকায় যেন ওই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব না পান, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব পালনকারীদের নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা করতে ইসিকে বলেছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করারও দাবি জানিয়েছে দলটি।
প্রতিনিধিদলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন ছিলেন।
বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই ইসির। ইভিএম ব্যবহার, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারসহ অন্য দাবির বিষয়ে কমিশন পরবর্তী সময়ে বৈঠকে আলোচনা করবে। কী কী দাবি গ্রহণ করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হেলালুদ্দীন আহমদ আরো বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপিকে বলা হয়েছে, ইভিএম নিয়ে সন্দেহ থাকলে বিএনপি সেগুলো আগে দেখে যেতে পারে। ইভিএম হ্যাক করার সুযোগ নেই।
"