নিজস্ব প্রতিবেদক
আনন্দ উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ
রাজধানী জুড়ে ছিল পুলিশ ও র্যাবের কড়া নজরদারি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। কোথাও ব্যারিকেড। যান চলাচল বন্ধ রাখা হয় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। এর পরও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। কড়া নজরদারির মধ্যেই নেচে-গেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেন রাজধানীবাসী। তবে শেষ বেলায় কালবৈশাখী ঝড় এবং সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ হয় উৎসব।
গত শনিবার রাতে ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত ১২টা ১ মিনিট, তখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার আকাশ ভরে ওঠে আতশবাজির বর্ণিল আলোকচ্ছটায়। উৎসবমুখর হয়ে বর্ষবরণ করেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষবরণের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। হাজারো তরুণ-তরুণী নেচে-গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করেন। অনেককেই দেখা যায় আতশবাজি ফোটাতে। অনেকে হাজির হন ঢোল-বাদ্যের ঝঙ্কার তুলতে। এছাড়া বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর মঙ্গল শোভযাত্রায় আলাদা প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ফকির লালন সাঁইয়ের বিখ্যাত গানের কলি ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’ এই শোভযাত্রার সামনে ছিল কয়েক সারি র্যাবের সশস্ত্র দল। তারও আগে ছিল পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল ঘুরে আবার শোভাযাত্রা শেষ হয় টিএসসি এলাকায়। তবে এতে মানুষের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে শোভযাত্রার শেষ প্রান্ত আবার ঘুরে টিএসসি এলাকায় আসতে পারেনি। কারণ সড়কে অত জায়গা ছিল না। কেবল শোভযাত্রার আগে বা পরে নয়, সড়কের দুই পাশও পুলিশ ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পাহারায়। মিছিলে মাঝপথে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, কাউকে বের হতেও দেওয়া হয়নি। কেউ মুখোশ পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেনি।
এর আগে ভোরে ও সকালে উদ্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশে অন্তত পাঁচ জায়গায় পড়তে হয়েছে তল্লাশিতে। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পাশাপাশি আর্চওয়ের সবুজ সংকেতের পরই ঢুকতে পেরেছে মানুষ। ব্যাগ নিতে দেওয়া হয়নি কাউকেই।
পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও শ শ নিরাপত্তকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কাজ করেছে ডগ স্কোয়াড এবং বোমা ডিসপোজাল দলও দায়িত্ব পালন করেছে। পুরো এলাকাই সিসি টিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ছিল বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ারও। উৎসব এলাকায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ ছিল আলাদা। এবার নতুন এক ধরনের উদ্যোগও ছিল। নারী হয়রানি এবং ধূমপান রোধে কাজ করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতও। তবে নববর্ষের উৎপাত দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁশি ভুভুজেলায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি। নিষেধ করা হলেও এই বাঁশি বাজাতে দেখা গেছে তরুণদের।
সকালে রমনা উদ্যানে প্রবেশের সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক দফা, মৎস্য ভবন এলাকায় দ্বিতীয় দফা, রমনা উদ্যানে রমনা চায়নিজের সামনে আরেকবার এবং রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানস্থলের কাছে আরেক দফা তল্লাশিতে পড়তে হয়েছে। ঢুকতে হয়েছে আর্চওয়ে দিয়ে।
পুরোটা সময় অনুষ্ঠানস্থলের ছবি তুলতে দেখা গেছে ড্রোন দিয়ে। পুলিশ ও র্যাব কার্যালয় থেকে উড়ন্ত ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলে র্যাব শুভেচ্ছা জানিয়েছে নববর্ষের। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর। কোথাও কোনো তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে, শনিবার বিকেল ৪টা অবধি বেশ রোদ ঝলমলে ছিল দিনটি। বলা ভালো, ওই সময় পর্যন্ত গরমে মানুষকে রীতিমতো ঘামতে হয়েছে। আর ওই সময় পর্যন্ত আকাশে মেঘের কোনো চিহ্নও ছিল না। পহেলা বৈশাখের অনেক আয়োজনই তখন পুরোদমে চলেছে। তবে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকেই বদলে যেতে শুরু করে আবহাওয়া। এর পরপরই শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়, সঙ্গে বৃষ্টি। আর তাতেই শেষ হয় রাজধানীবাসীর এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন।
"