জুবায়ের চৌধুরী

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

বর্ষবরণে যৌন হয়রানি : বিচারে ধীরগতি

শনাক্ত সাত নিপীড়ক অধরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ২০১৫ সালে বর্ষবরণে নারী নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ৮ যৌন নিপীড়ককে শনাক্ত করে। সেই নিপীড়কদের ধরিয়ে দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরস্কারও ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও শনাক্তদের মধ্যে শুধু মো. কামাল (৩৫) নামের একজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

এদিকে, গ্রেফতার কামালের বিরুদ্ধে ৯ মাস আগে ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠন করলেও এ পর্যন্ত একজন সাক্ষীকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে মামলার বিচার শুধু চার্জ গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তাই এক আসামিতেই শুরু হয়েছে বিচার। বিচারকাজও চলছে খুবই ধীরগতিতে। এ সম্পর্কে ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘পুলিশের দায়িত্ব সাক্ষী হাজির করা। কিন্তু পুলিশ সাক্ষী হাজির করছে না।’

২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে কয়েক নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় শনাক্তদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আসামিদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনও গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে কামাল গ্রেফতার হলে তাকে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।

২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার ওই আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।

চার্জ গঠনের আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় রাজধানী ঢাকার শাহবাগ থানাধীন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় আপনি আসামি মো. কামাল পহেলা বৈশাখ ১৪২২ উদ্যাপন উপলক্ষে হাজার হাজার নারী পুরুষের উপচেপড়া প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে অজ্ঞাত মেয়েদের শরীরে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটান।’

মামলাটির চার্জশিটে ৩৪ জনকে সাক্ষী করে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তকালে একাধিকবার ঘটনাস্থল গিয়ে প্রত্যক্ষ সাক্ষী, ভিক্টিমদের সন্ধান এবং আসামিদের সন্ধান ও গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। কামাল ছাড়া অন্য কোনো আসামির সন্ধান পাওয়া যায়নি। ৮ আসামির জন্য এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মিডিয়ায় প্রচার করা সত্ত্বেও আসামিদের নাম-ঠিকানা ও সন্ধান পাওয়া যায়নি। বাকি সাতজনের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে।

পুনঃতদন্তের সাক্ষী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীর জবানবন্দিতে ওই দিনের যৌন হয়রানির ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৫টা থেকে আমরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে দেখতে পাই ৫ গ্রুপে বখাটেরা নারীদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করছে। প্রতিহত করার জন্য আমিসহ আমার সঙ্গীরা এগিয়ে যাই। রাজু ভাস্কর্যের পূর্ব পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩ নম্বর গেটের সামনের রাস্তার ওপর একটি মেয়ের শাড়ি বখাটেরা খুলে ফেলে এবং ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলে। তখন আমরা বখাটেদের কিলঘুষি মেরে তাড়িয়ে দেই। মেয়েটিকে শরীর ঢাকার জন্য আমার পাঞ্জাবি খুলে দেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist