হাসান ইমন

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

বর্ষবরণে প্রস্তুত সারা দেশ

আজ পয়লা বৈশাখ, বাংলা পঞ্জিকার নতুন বছরের প্রথম দিন। নতুন বছরকে বরণ করতে প্রস্তুত রাজধানীসহ সারাদেশ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। এছাড়া সকাল ৯টার দিকে চারুকলা থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হলোÑ ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’

আজ চারদিকে থাকবে উৎসবের আমেজ। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজনটা থাকবে রমনা বটমূলে। এটি ছায়ানটের ৫১তম আয়োজন। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুরে সুরে নতুন বছরকে সম্ভাষণ জানানো হবে। এছাড়া সকাল ৯টায় দিকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, শিশু একাডেমি ঘুরে টিএসসি চত্বর দিয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার সফল প্রস্তুতি শেষ করেছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিনের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কারণে যে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছিল, দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন তারা। গতকালও দেখা গেছে, কেউ রঙিন কাগজ লাগাচ্ছেন, আবার কেউ মাটির ভাস্কর্যকে নতুন করে ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। জেলে, হাতি, টেপা পুতুল, বক ও মাছ, মহিষ, সূর্য, মা পাখি, রাজা রানিসহ দশেরও অধিক প্রতীক নিয়ে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে বলে জানা গেছে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’ এটি নেওয়া হয়েছে বাউল লালন শাহের গান থেকে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রস্তুত কমিটির সদস্য জাহিদুল হক বলেন, নানা বাধা-বিপত্তি, ঝড়-বৃষ্টি আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সবাই প্রচুর কাজ করছেন। আশা করছি ভালো কিছুই হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এবার শোভাযাত্রায় নতুন একটি মোটিফ থাকছে, তাহলো মহিষ। মহিষ আসলে শান্ত ও নিরীহ একটি প্রাণী। মানুষের ধীরস্থিরের প্রতি নজর দিতে এটা করা হয়েছে। মূলত মানুষকে বুঝতে পরলেই সোনার মানুষ হওয়া যাবে, এটাই এবারের মূল উপজীব্য।’

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখকে বরণ করার দায়িত্ব পায় চারুকলার কোনো এক নির্দিষ্ট ব্যাচে। এবারে দায়িত্ব পড়েছে ১৯-২০তম ব্যাচ শিক্ষার্থীদের কাঁধে। বছরের এই সময়টা চারুকলায় পা রাখার জায়গা থাকে না। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন বলে জানালেন মশিউর রহমান মিশু। ২০তম ব্যাচের এই ছাত্র এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সহযোগী আহ্বায়ক। শুরু থেকেই তিনি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন পুরোটা এলাকা। মিশু বললেন, সাধারণত আমাদের প্রতিদিনের বিক্রি হয় লাখ টাকারও ওপরে, গত কদিন এলাকাটি আন্দোলন মুখর, চারদিকের পথ রুদ্ধ। এ অবস্থায় আমাদের তৎপরতা সম্পর্কে জানতেন না অনেকেই।

এদিকে, বৈশাখ ঘিরে দেশের নামকরা ফ্যাশন বুটিক হাউসগুলোতেও থাকছে বাহারি আয়োজন। প্রতিষ্ঠিত দেশীয় পোশাক-ঘরগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য দোকানও সেজেছে বৈশাখী সাজে। ছেলেদের থাকছে বৈশাখী ফতুয়া-প্যান্ট, শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবির কালেকশন। হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি কাজ, প্রিন্ট ও নানা মাধ্যমের ব্যবহারে তৈরি পোশাকগুলো উৎসবমুখী, আরামদায়ক এবং কাট ও ফিনিসে উন্নত। আর মেয়েদের জন্য রয়েছে নানা ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফ্রগ, স্কার্ট-টপস ও ফতুয়া থাকছে বিভিন্ন দামে, সাদা, লাল, কমলা, হলুদসহ উজ্জ্বল নানা রঙে।

এদিকে, বর্ষবরণের দিনে রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা থাকবে কঠোর। রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জুড়ে জোরালো নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। এই বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, নববর্ষকে ঘিরে গোটা রাজধানী কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন পয়েন্টে কড়া নিরাপত্তা থাকবে। পুলিশের পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ডগস্কয়াড এবং বোমা ডিসপোজাল টিম থাকবে। পুরো ভেন্যু সিসি টিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

রমনার বটমূলে সকালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে আর্চওয়ে দিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে মানুষকে প্রবেশ করানো হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও থাকবে পুলিশের প্রহরা। মাঝপথে কেউ শোভাযাত্রায় প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া কেউ কোনো বাণিজ্যিক ব্যানার দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন না। রমনা পার্কে তিনটি প্রবেশ এবং তিনটি বাইরের গেট থাকবে। সকালে মানুষের চাপ থাকলে প্রবেশ গেটেও বাহির গেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বিকেল ৫টার মধ্যে উন্মুক্তস্থানে কর্মসূচি শেষ করতে হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে তাদের অনুষ্ঠান শেষ করবে।

অন্যদিকে, গত কয়েকদিন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, হাতিরপুল সিটি সেন্টার, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মিরপুরের বিভিন্ন শপিং মলে তরুণ-তরুণীর ভিড় লক্ষ করা যায়।

প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আয়োজন করছে বাঙালির চিরন্তন পছন্দের ইলিশ ভাজা, শুঁটকি ও নানারকম ভর্তা। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ও বাসায় আয়োজন করা হবে, ভেজিটেবল স্টিক, মিক্সড দেশি সালাদ, মশলাদার কুমড়ো সালাদ, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, পুঁদিনা ও টমেটোর চাটনি ও নানারকম আচার। এছাড়া তাজা ফল, পিঠা, সেমাই, ফিরনি, রসমালাই, মিষ্টি দই, গুড়ের পায়েসসহ আরো অনেক কিছু।

বৈশাখ মাস এলে বেড়ে যায় মৃৎশিল্পের কদর। হাঁড়ি, কড়াই, কলস, ভাঁড়, টালি, খেলনা, পুতুল, ফুলদানি, ছাইদানি ইত্যাদি বাংলার পুরনো ঐতিহ্য বহন করে। পনুয়া, কসুরি, ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রকার খেলনা যেমন-পুতুল, নৌকা, বালতি, গামলা, জগ, চুলা, টাকা জমানোর ব্যাংক, ঘর সাজানোর নানা মৎশিল্পের উপকরণ, শিকা ইত্যাদি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist