প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ এপ্রিল, ২০১৮

ফারমার্স ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি

‘লুটপাট হলেও টাকাটা যেন ফেরত পাই’

ঢাকার ধানমন্ডিতে ফারমার্স ব্যাংকের শাখায় ২ লাখ টাকার একটি চেক নিয়ে এসেছেন মাইনুদ্দিন আহমেদ। এ নিয়ে তিনি মোট তিনবার একই চেক নিয়ে এখানে আসলেন। কিন্তু প্রতিবারই তাকে বলা হয়েছে, ব্যাংকে টাকা নেই। কবে নাগাদ তিনি সে চেকের বিপরীতে টাকা পাবেন নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না ব্যাংক। মানুষের ভরসার জায়গা ব্যাংক। সেখানে যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কথাই বলছিলেন তিনি। বিসিসি বাংলা।

বাংলাদেশে এখন ব্যাংকিং খাতে যে অস্থিরতা চলছে সেটির শুরু হয়েছে বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে ৬০০ কোটি টাকা অনিয়মের মধ্য দিয়ে। শুধু ফারমার্স ব্যাংক নয়, সম্প্রতি দেশের আরো বেশকিছু বেসরকারি ব্যাংকে নগদ টাকার ঘাটতি রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপর। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি অর্থের ৫০ শতাংশ টাকা বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখা এবং ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা জমা রাখে সেটির হার কমানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু ব্যাংক তাদের আমাদের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে এবং সেটি আদায়ও করতে পারছে না।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ব্যাংকের মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে শাস্তি তো হচ্ছেই না উল্টো জনগণের টাকা দিয়ে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, একেবারে খারাপ অবস্থায় আসার আগ মুহূর্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা আছে পুরো বোর্ড ভেঙে দেয়া। সেটা তো কিছুই করেনি তারা।

ছয়-সাত মাস আগেও বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, যেখানে আমানতের ওপর পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদ দিত না, এখন তারাই দ্বিগুণ হারে সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখারের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম বর্তমান সংকটকে তিনি কিভাবে দেখছেন? ইফতেখার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বড় সংকট’ হিসেবে দেখছেন না। তিনি মনে করেন সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্য আমানতের ভারসাম্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংকে হয়তো তারল্য সংকট থাকতে পারে কিন্তু সেটি পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার চিত্র নয়। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং মালিকরা পরিস্থিতিকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে খানিকটা চিড় ধরেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন ফেরদৌস আরা। চাকরির আয় থেকে সাংসারিক খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে কিছুটা হলেও সঞ্চয়ের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে নানা অস্থিরতার খবর তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

ফেরদৌস আরা বলেন, ব্যাংকে টাকা রেখে গ্রাহক কিভাবে নিরাপদ মনে করবে, সে স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) তারা (সরকার) ঠিক করবে। আমি চাই সরকার আমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, লুটপাট হয়ে গেলেও আমি আমার টাকাটি ফেরত পাব। এ গ্যারান্টি আমাকে দিতে হবে ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে সরকার নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছে তাদের। এমন কথা বলছেন অনেকেই। ব্যাংকিং খাতে পরিবারতন্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি আইনও পাস করেছে সরকার। সে আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো বেসরকারি ব্যাংকে একই পরিবার থেকে চারজন সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন। বিশ্লেষকরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, আইনে এ ধরনের পরিবর্তন তাদের ভাষায় ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এবং চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংককে পাস কাটিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ভূমিকা কতটা পালন করতে পারছে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তী মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেগুলো ঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তার ক্ষমতা প্রয়োগ না করত তাহলে ব্যাংকিং খাত চলছে কীভাবে? এমনটা মনে করেন চক্রবর্তী। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে তার ক্ষমতার শতাংশ প্রয়োগ করতে পারছে না এটা বলা বোধ হয় সুবিবেচনা হবে না। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ব্যাংকিং খাতে অনিয়মে সম্পৃক্তদের যদি শাস্তি না হয় তাহলে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে যথেচ্ছাচারকেই উৎসাহিত করা হবে বলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist