নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলা
জড়িত কয়েকজন শনাক্ত মামলা হয়নি : তদন্ত কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদেরও শনাক্তের চেষ্টা হচ্ছে। তবে ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও জড়িত সন্দেহে কাউকে দায়ী করে এখনো মামলা করা হয়নি। এদিকে, ঘটনার তদন্তে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে শিগগিরই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার থেকে তদন্তের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবে কমিটি।
গতকাল ভিসির বাসভবন পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি
বলেন, ১৯৭১ সালের নৃশংসতাও এরকম হয়নি। এ সময় তার সঙ্গে ভিসি, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ছিলেন। এর আগে সকালে ভিসির বাসভবন পরিদর্শন করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ভিসির বাসভবনে ভাঙচুরকারীদের গ্রেফতার করতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভিসির বাস হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ভয়াবহ এই তান্ডবকারীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
গত রোববার রাত ১টার দিকে এক থেকে দুই হাজার বিক্ষোভকারী ঢাবি ভিসির বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা মূল গেট ভেঙে ফেলে এবং দেয়ালের তারকাঁটা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে রড, হকিস্টিক, লাঠি ও বাঁশ ছিল। তবে হামলায় উপাচার্যের পরিবারের কেউ আহত হননি। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে আন্দোলনকারীরা ভেতরে ঢুকে গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
ঘটনার পরদিন নিজ কার্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার বাসভবনে ‘মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা’ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেছেন, ‘হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিলেন না। রোববার রাতে যে তান্ডব চালানো হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এরা প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী। লাশের রাজনীতির জন্য তারা এই তান্ডব চালিয়েছে।’ তিনি আরো দাবি করেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের হামলাকারীদের মতো মুখোশ পরে তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। তাদের হামলার ধরন দেখেই বোঝা গেছে তারা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, তারা প্রশিক্ষিত একটি দল।’
মুখোশধারীদের খোঁজে মাঠে গোয়েন্দারা : মুখোশধারী হামলাকারী কারা এ বিষয়ে তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, উপাচার্যের বাসায় হামলা চালানোর সময় যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের অনেকের মুখই কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। আবার কারো কারো মাথায় হেলমেটও ছিল। এতে বোঝা যায় তারা নিজেদের চেহারা ঢেকে পরিচয় আড়াল করতে চাচ্ছে। এই পরিচয় আড়াল করে তান্ডব চালানো হামলাকারীরা অন্য কোনো এজেন্ডা নিয়ে এসেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আশপাশের সিসিটিভি, বিভিন্ন মিডিয়ায় আসা ফুটেজ ও স্টিল ছবির পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হামলাকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হক জানান, হামলাকারী কারা ছিল তা তদন্তের বিষয়। তদন্ত না করে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে সে অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গত রোববার বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের পদযাত্রা শুরু হয়। পরে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে যায়। বিকেল ৩টা থেকে সেখানেই অবস্থান নেন তারা। এ সময় শাহবাগের আশপাশের সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থান ধরে রাখলে রাত পৌনে ৮টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর থেকেই থেমে থেমে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। একইসঙ্গে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও লাঠিপেটায় আহত হন অনেকে।
ওইদিন রাত ১টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় পিছু হটে আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ ও চারুকলা এলাকা থেকে আন্দোলনকারীরা সরে চলে যান ভিসি চত্বরে। সেখানে প্রথমে ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে, পরে বাড়ির ভেতরে রাখা দুটি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইসঙ্গে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয় উপাচার্যের বাসভবনে। দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে।
"