নিজস্ব প্রতিবেদক
নব্য জেএমবির ‘ব্যাট উইমেন’ প্রধান
জঙ্গি তানভীরের স্ত্রী নাবিলা ৫ দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার জঙ্গি তানভীরের স্ত্রী হুমায়রা ওরফে নাবিলার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কেশব চন্দ্র রায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বুধবার রাতে নাবিলাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর আগে গত বছরের ১৫ আগস্ট পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ওবায়দুর রহমান জানান, গ্রেফতার নাবিলার স্বামী তানভীর ইয়াসির করিমও নব্য জেএমবিতে সম্পৃক্ত। গত বছরের নভেম্বরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নাবিলা নব্য জেএমবির ‘সিস্টার্স উইংয়ের’ দায়িত্বশীল পথে রয়েছেন। তিনি নব্য জেএমবির মূল সমন্বয়ক আকরাম হোসেন খান নিলয় গ্রুপের অর্থদাতা। নাবিলা নব্য জেএমবির নারী শাখা ‘ব্যাট উইমেন’-এর প্রধান ছিলেন। ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তান নাবিলা নিয়মিত জঙ্গিকাজে অর্থায়ন করতেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, গত বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের র্যালিতে হামলা পরিকল্পনায় হুমায়রা ওরফে নাবিলার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি অন্যতম একজন অর্থদাতা। তাকে ওই হামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, অনেক আগেই জঙ্গিবাদে নাবিলার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তারা নিশ্চিত হন। তার স্বামীকে গ্রেফতারের সময় থেকেই তাকে নজরদারি করা হচ্ছিল। তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাই তাকে এতদিন গ্রেফতার করা হয়নি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানিয়েছে, নাবিলা রাজধানীর একটি বিলাসবহুল শপিং মলের মালিকের মেয়ে। তিনি ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেন। পরে মালয়েশিয়ার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন। তার স্বামী তানভীরও নর্থ-সাউথে পড়ালেখা করেছেন। সেখানেই স্বামীর সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন নাবিলা।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, গত ১৯ নভেম্বর তানভীরকে গ্রেফতার করার পর নাবিলা নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা আকরাম হোসেন খান নিলয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করে কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন। তানভীর কারাগারে থাকলেও নিলয় রিমান্ডে রয়েছেন। দুজনই হুমায়রার জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেন। তবে হুমায়রা ওই সময়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকে গ্রেফতার না করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। আত্মগোপনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে গত বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
অপরদিকে, জঙ্গি তামিম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে সাদিয়া আফরোজ নীনা নামের রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় গোয়েন্দা পুলিশ বুধবার তাকে গ্রেফতার করে। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান শাখার অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আটক সাদিয়ার কাছ থেকে পাওয়া তিনটি মোবাইল সেটে মানসিক উত্তেজনাকর ও বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের জখমের ছবি, আগ্নেয়াঅস্ত্র ব্যবহারের ফুটেজ ও বিভিন্ন জঙ্গি নেতার ছবি ও তাদের বক্তব্যের ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে তার মুঠোফোনে টেলিগ্রাম, অরবিট, অরফক্স নামে তিনটি অ্যাপস (ফিচার) আছে। এসব অ্যাপস ব্যবহার করে ওইসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে জঙ্গি সদ্যদের উদ্বুদ্ধ করে অভিযুক্ত সাদিয়া আফরোজ নীনা দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করে আসছে।
পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) নিজ নামে মোট তিনটি আইডি খোলে জেএমবির সক্রিয় সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া আফরোজ নীনা।
"