নিজস্ব প্রতিবেদক
সামনে রমজান
মুনাফালোভীরা সক্রিয় এখনই
রমজান শুরুর আগেই মুনাফালোভীরা সক্রিয় হয়ে উঠছেন নিত্যপণ্যের বাজারে। ঊর্ধ্বগতির হাওয়ায় দোলাচ্ছেন মাংস, চিনি ও ডিমের দাম। আর বাড়তি দামে চাল নিয়ে ক্রেতাদের অস্বস্তি তো আছেই। তবে এই অবস্থা বছরখানেক ধরে চলছে। কখনো পেঁয়াজের দাম কখনোবা বাড়ে চালের। আবার কখনো অস্থিতিশীল সবজির বাজার। গতকাল দেখা গেল, বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে এ অবস্থার অবসান চান ক্রেতারা, আসছে রমজান মাসের আগেই স্থিতিশীল বাজার দেখতে চানা তারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বাজারভেদে সবজির দামের পার্থক্য রয়েছে ৫ থেকে ১০ টাকার ওপরে। বিগত বছর থেকে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন ক্রেতারা। নতুন বছরে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিকের আশ্বাস বিক্রেতারা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরঞ্চ আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। ক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, রমজান সামনে রেখে বিক্রেতারা আবারও দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিমের দাম বাড়তি। প্রতিটি ডিমের দাম ১-২ টাকা করে বেড়েছে। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে ৭ টাকা করে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির ডিম গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮-৯ টাকায়। তবে স্থিতিশীল রয়েছে সবজি, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, পেঁপে, করলা, পটোল, ঢেড়সসহ সব ধরনের শাক এখন বাজারে ভরপুর। ফলে দামও তুলনামূলক কম। তবে ডিমের দাম কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে বিক্রেতারা কিছু বলতে পারছেন না। ডিম বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারদের কাছ থেকে দুই সপ্তাহ ধরে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
হাজিপাড়া বৌবাজরের ডিম বিক্রেতা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি করেছি ৭০ টাকায়। এখন সেই ডিম ৭৮ টাকা ডজন বিক্রি করতে হচ্ছে। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি করেছি ৭৫ টাকা ডজন।
ডজন হিসেবে বিক্রি করা এই বিক্রেতার কাছে ডিমের দাম যে হারে বেড়েছে খুচরা দোকানে দাম বেড়েছে তার থেকে বেশি হারে। রামপুরা বাজারে গত সপ্তাহে যে ডিম ৭ টাকা পিস বিক্রি হয়, সেই ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৮-৯ টাকা পিস।
এই দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী মো. শামছু বলেন, ‘ডিমের দাম এখন বেশ বাড়তি। এক খাঁচি ডিম (৩০টি) কিনতে এখন আমাদের যে খরচ হচ্ছে, তাতে এক পিস ডিম ৮ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। পাইকাররা দাম কমালে আমাদের দোকানেও দাম কমে যাবে।’
এদিকে হাজিপড়া বৌবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা নতুন দেশি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের মতোই ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।
এদিকে কারওয়ান বাজারে এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যা রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ অঞ্চলের বাজারগুলোতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পেঁয়াজ-মরিচের দামের বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা বাজারের মো. ইসমাইল বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই কাঁচামরিচের দাম কম। পেঁয়াজের দামও বেশ কিছুদিন ধরে কম। তবে এখন হঠাৎ করে ভারতীয় ও মেহেরপুরের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের মতোই ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ-মরিচের পাশাপাশি অধিকাংশ সবজির দামও এখন বেশ কমই আছে। তবে বাজারে নতুন আসা সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। বাজারে এ সবজিটির দামই সব থেকে বেশি। এ ছাড়া কেজি ৩০ টাকার ওপরে থাকা সবজির মধ্যে পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি ও ঢেঁড়স। আগের সপ্তাহেও এই সবজিগুলোর দাম এমনই ছিল।
কম দামের সবজির মধ্যে লাউ আগের সপ্তাহের মতোই ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে কিছুটা দাম বাড়লেও আবারও টমেটোর দাম ১৫-২০ টাকায় নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শিমও আগের সপ্তাহের মতোই ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গাজর ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, ছোট আকারের কাঁচা মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে।
"