গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৬ এপ্রিল, ২০১৮

খুলনা-গাজীপুরে ভোটের হিসাব-নিকাশ শুরু

খুলনা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। তবে এই প্রধান দুই দলের মনোনীত প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ ভোটে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তাদের ভাষ্য, স্বচ্ছ মনের মানুষ এবং নগরীর উন্নয়নে সক্ষম ব্যক্তিকেই এবার নগরপিতা হিসেবে বেছে নেবেন তারা। গত ৩১ মার্চ পরিচ্ছন্ন নগরী খ্যাত খুলনা সিটি করপোরেশন (কুসিক) এবং রাজধানীর উপকণ্ঠের গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৫ মে ভোটগ্রহণ। এখন চলছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা। এরই মধ্যে দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন; তালিকায় রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান মেয়র-কাউন্সিলর।

সূত্র জানিয়েছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে ভোটের প্রচারণা এখনো বাকি। আগামী ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণায় নেমে পড়বেন দল সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রুতি এবং উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠবেন। এদিকে এই সিটিজুড়ে চা-দোকান থেকে সর্বত্রই সরব আলোচনা আওয়ামী লীগ বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কারা! প্রাপ্ত তথ্য মতে, খুলনা সিটিতে আওয়ামী লীগের মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র তালুকদার খালেক নাকি সদর থানার সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম মেয়র পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ। তবে শেখ পরিবারের সদস্য শেখ জুয়েলের নামও আছে আলোচনায়।

অপরদিকে, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু নাকি বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামানকে দল মনোনয়ন দিচ্ছেন তাও আলোচনার বাইরে নেই। তবে এদের যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক প্রার্থী দেখে আগামীর নগরপিতা নির্বাচন করতে চান ভোটাররা। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, আওয়ামী লীগের তালুকদার খালেক এবং বিএনপির নজরুল ইসলামকে মনোনয়ন দিলে এ সিটিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ প্রার্থী এবং ব্যক্তি বিবেচনায় দুইজনই তুমুল জনপ্রিয়, যা ভোটারদের হিসাবে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। তাদের হিসাবে, আওয়ামী লীগ তালুকদার খালেককে এবং বিএনপি বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামানকে পুনরায় সমর্থন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। সেখানে ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থী জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। খালেক এবং মঞ্জু দুইজনের বাইরে প্রার্থী হলে আগামীর নগরপিতা নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারদের নতুন করে ভাবনায় ফেলতে পারে।

কথা হয় বটিয়াঘাটার বাসিন্দা খুলনা মহানগরীর ইজিবাইক চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোটের প্রচারণা নেই। কিন্তু প্রার্থী নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। বর্তমান মেয়র তার মেয়াদে উন্নয়নের কোনো চমক দেখাতে পারেনি। কিন্তু এই সিটিতে বিএনপির একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। এবার বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে সিটি তাদের হাতছাড়া হতে পারে। এক্ষেত্রে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একইভাবে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার খালেক গতবার মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হলেও তার ব্যক্তিগত ইমেজ এবং উন্নয়ন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। ওই নির্বাচনে দলীয় কোন্দলে ফেল করলেও এবার তাকে প্রার্থী করা হলে জয়ে নৌকা অনেকটা এগিয়ে থাকবে। এর বাইরে কাউকে প্রার্থী করা হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসানসহ অনেক ভোটার অভিন্ন মত দেন। এক নজরে তথ্য, খুলনা সিটিতে ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ সিটিতে ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৬। নির্বাচনে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর সিটির রিটানিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন ম-ল বলেন, মেয়র পদে এখন পর্যন্ত ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১ জন মনোনয়ন কিনেছেন।

খুলনা সিটির রিটানিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, গত বুধবার পর্যন্ত খুলনা সিটিতে মেয়র পদে দুইজন মনোনয়ন নিয়েছেন। এ দুইজনের একজন বর্তমান মেয়র অন্যজন সিপিবি। আর সাধারল ওয়ার্ডে ৮০ জন এবং সংরক্ষিত ওর্য়াডে ১৩ জন।

এদিকে, গাজীপুর সিটিতে জয়-পরাজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলকেই ভাবনায় ফেলেছে। এর জন্য প্রার্থী নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দুই দলই। প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগের মধ্যে গত সিটি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ এবং মো. জাহাঙ্গীর আলম আলোচনায় রয়েছে। একইভাবে বিএনপির বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দীন সরকার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরের প্রবেশদ্বার গাজীপুর। এ কারণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষে করে দুই দলই জয় পেতে মরিয়া।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ সিটির জয়ে নতুন প্রার্থীর সন্ধানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। এর মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম নৌকার প্রার্থী এবং গাজীপুর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসান উদ্দীন সরকার ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছে। এখন চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা না হলেও দলের অভ্যন্তরে এ দুইজন প্রার্থী নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিবেচনায় গাজীপুর সিটির নির্বাচনও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। গাজীপুর সিটির বাসিন্দা আবদু রাহিম বলেন, গতবার আর এবার সিটি নির্বাচনে দুই দলকেই প্রার্থী মনোনয়নের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। কারণ সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির সম্ভাবনা বেশি। তাই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে দলটি শুনেছি ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে। একইভাবে সরকার সমর্থিতরাও পিছিয়ে নেই। তারাও নতুন প্রার্থীর সন্ধানে রয়েছে।

গাজীপুর সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ সিটিতে ভোটার ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। এ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন ম-লকে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন একসঙ্গে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়েছিল। তবে ভোটের পর একেকটি সিটি করপোরেশনে একেক দিন প্রথম বৈঠক বসে, আর ওই বৈঠক থেকেই করপোরেশনের মেয়াদ শুরু হয়।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। খুলনা সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। ৩০ মার্চ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগে যেকোনো সময় ভোট করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist