হাসান ইমন
বদলে যাবে রাজধানীর ২৬ পার্ক ও মাঠ
* ডিএনসিসির আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন প্রকল্প * ছয়টির কাজ শুরু * থাকবে বয়স্ক বিনোদনের ব্যবস্থা
আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পে সংস্কার করা হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৬ পার্ক ও খেলার মাঠ। এখানে বয়স্কদের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে, সেজন্য সীমানা দেয়াল থাকবে না। সবুজায়নের সঙ্গে থাকবে বিশ্রামের ব্যবস্থা। সাইকেলপ্রেমীদের জন্য থাকছে আলাদা লেন। খেলাধুলাসহ শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগার নির্মাণ করা হবে।
এদিকে ছয়টি পার্ক ও মাঠের সংস্কারকাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। কয়েকটি পার্কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আরো কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন। ক্রমান্বয়ে বাকিগুলোর আধুনিকায়নে হাত দেবে সংস্থাটি। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, পার্কগুলোতে অধিক গাছ রোপণসহ পানি নিষ্কাশন, উন্নত টয়লেট স্থাপন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম ও খেলাধুলার পরে হালকা নাশতার জন্য পার্ক ও খেলার মাঠের পাশে থাকবে ক্যান্টিন। মাঠে পর্যাপ্ত ঘাস লাগানো ও সীমানা নির্দিষ্টকরণ থাকবে। বয়স্কদের খেলাধুলাসহ আলাদা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য পার্কের ভেতর বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে পার্ক ও মাঠের সীমানা দেয়াল থাকবে না। পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তারক্ষীও রাখা হবে প্রতিটি পার্ক ও খেলার মাঠে। পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরে যাতে আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শ্রীহীন হয়ে না যায় এজন্য নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়া পার্কে থাকবে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হবে। এ ছাড়া হাটার জন্য ওয়াকওয়ে, সাইকেল ট্রেক, ফোয়ারা নির্মাণ, শিশু খেলনা স্থাপন, শরীরচর্চার জন্য যন্ত্রপাতি, মহিলাদের বসার স্থান, গেস্ট হাউস ও ঈদগাহ মিম্বার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য তিন কোটি টাকা ব্যয় করবে সিটি করপোরেশন। আর ২৭৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেবে সরকার। গড়ে প্রতিটি পার্ক ও মাঠ সাজাতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা। তবে আয়তন বুঝে কম-বেশি ব্যয় করা হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জাকির হোসেন, সলিমুল্লাহ ও উত্তরা ৭নং সেক্টর পার্ক এবং মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে ঈদগাহ মাঠের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে যেসব পার্ক সংস্কারের আওতায় আনা হবে সেগুলো হলোÑ তাজমহল রোড পার্ক, লালমাটিয়া ডি-ব্লক পার্ক, হুমায়ূন রোড পার্ক, মোহাম্মদপুর টাউন হল শহীদ পার্ক, শ্যামলী পার্ক, মিরপুর গুদারাঘাট পার্ক, ফার্মগেট ত্রিকোণ পার্ক, শিয়া মসজিদ পার্ক, ইকবাল রোড মাঠ পার্ক, কারওয়ান বাজার শিশুপার্ক, নয়াটোলা শিশুপার্ক, শেরশাহ সূরি লেন পার্ক, গুলশান পার্ক, বনানী পার্ক ও উত্তরার কয়েকটি পার্ক। এ ছাড়া তাজমহল রোড মাঠ ও মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে ঈদগাহ মাঠ সংস্কার হবে।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শহর বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল মহানগরী। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং উন্মুক্ত স্থান কমার কারণে শহরে সবুজের সমারোহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিশুদের মানসিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে সুস্থ পরিবেশে অবসর সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হবে।
ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘এই প্রকল্পের বাইরেও ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে ইতোমধ্যে কয়েকটি পার্কের উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। একনেকে প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ায় এখন নকশা প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করা হয়েছে। এই অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
"